সারোয়ার মিরন: বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এটিআরসি) বহুমূখী চলছাতুরীর যাঁতাকলে পিষ্ট হতে চলেছে পাঁচ লক্ষাধিক নিবন্ধনধারী। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা বরারবই বহুমূখী সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র লিখিত পরিক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ন ঘোষনা করা হতো। এরপর এলো এমসিকিউ এবং লিখিত। বর্তমানে প্রিলিমিনারী উত্তীর্ন সাপেক্ষ্যে লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা দিতে যেতে হয় বিভাগীয় শহরে।
এ যেমন সনদের মেয়াদ নিয়ে বহুবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। প্রথম অবস্থায় নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ছিলো পাঁচ বছর। এর পর একই সনদের মেয়াদ ঘোষণা করা হলো আজীবন। গতো নিবন্ধন থেকে সনদের মেয়াদ ঘোষনা করা হয়েছে তিন বছর।
বহু প্রত্যাশা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলো এনটিআরসিএ কর্তৃক কেন্দ্রিয় ভাবে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া। আশায় বুক বেঁধেছিল পাঁচ লক্ষাধিক নিবন্ধন সনদধারী। এবার তাহলে প্রকৃত মেধার ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ হবে। সকল দোলাচলকে পাশ কাটিয়ে জারি করা হলো গন বিজ্ঞপ্তি। এতে বলা হয়েছে এক থেকে বারতম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্নরা কেন্দ্রিয় ভাবে আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় কোটা সংরক্ষিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা থেকে প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে। উপজেলায় পর্যাপ্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে জেলা কোটা থেকে নিয়োগ দেয়া হবে। এভাবে জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় কোটায় নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরন করা হবে। ই-এপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় একটি মাত্র আবেদনে ১৮০ টাকা ফি প্রদান করে সব নিবন্ধন ও কোটার জন্য আবেদন করা যাবে।
কিন্তু গত ২০ জুলাই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা যায় প্রতিটি শুন্য কোটার জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে। প্রতিটি পদের জন্যই প্রার্থীকে প্রদান করতে হবে ১৮০ টাকা করে। অর্থ্যাৎ এক উপজেলায় যদি কোন বিষয়ে ১০ টা শূন্য পদ থাকে তাহলে একজন প্রার্থীকে দশবার আবেদন করতে হবে। ফি হিসেবে দিতে হবে ১৮০০ টাকা। ইতি পূর্বে দেশের কোন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমন ভুতুড়ে নিয়ম পরিলক্ষিত হয়নি।
একমাত্র ১২তম নিবন্ধন ছাড়া অন্য কোনটির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে ১ থেকে ১১ তম নিবন্ধন উত্তীর্নরা জানেনা ঠিক কতটি আবেদন করলে তার নিয়োগ লাভ করার সুযোগ থাকবে। নাকি আবেদন করার পর নিয়োগ আদৌ হবে কিনা! এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের পুন:নিরীক্ষন বা ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রাখেনি কর্তৃপক্ষ। সব গুলো পরীক্ষার মেধা তালিকা প্রকাশ না করা আবার ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্চতা নিয়েও প্রশ্নও দেখা যায়।
ত্র“টিপূর্ন ও ঝামেলাযুক্ত ই-এপ্লিকেশন প্রক্রিয়া আপাত ঠিকঠাক চললেও তিন দিনের মাথায় কপাল পুড়েছে মাধ্যমিক লেবেলের আইসিটি বিষয়ের দেড় লক্ষাধিক নিবন্ধনধারী। গত ১৪ জুলাই জারি হওয়া সার্কুলাবে ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্সধারী নিবন্ধন উত্তীর্নরা আবেদন করতে পারবে বলে উল্লেখ থাকলেও আবদেন প্রক্রিয়া শুরুও তিন দিনের মাথায় গত ২৩ জুলাই সার্কুলার থেকে অতি গোপনে এ বিষয়টি সরিয়ে ফেলা হয়। ফলশ্র“তিতে কম্পিউটারে ৬ মাসের কোর্সধারীদের আবেদন করার সুযোগ থাকলো না। কিন্ত আবেদন চলাকালীন এ তিন দিনে অনেকেই আবেদন করে ফিও পরিশোধ করেছেন। তাদের নাকি আবেদন বাতিল হবে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে ১ম থেকে ১১তম নিবন্ধনে উত্তীর্ন হয়ে ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্সধারীরা নিয়োগ পেয়ে কর্মরত আছেন। পেয়েছেন সরকারি অংশের বেতনও। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি হিসেবে কর্মরত শিক্ষকরাই ৬ মাসের কোর্স করে নিবন্ধনধারী। কেবল আমাদের বেলায় যত সব সমস্যা।
গন বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ন সকলেই চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে পারবেন। এরই সূত্র ধরে তিন দিন আবেদন প্রক্রিয়া চলার পরে হঠাৎ করে গোপনে কম্পিউটার বিষয়ে ৬ মাস কোর্সধারীদের বাদ দেয়া হলো। শুরু থেকেই কেন বা তাদের যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে? এখন কেন নয়? দেশের ৯৫ শতাংশ শুণ্য পদে ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্সধারী নিবন্ধন উত্তীর্ন হয়ে বর্তমানে কর্মরত থাকলে বাকি ৫ শতাংশের বেলায় ৬মাসের কোর্স সমস্যা হবার কথা না। দেড় লক্ষাধিক নিবন্ধন উত্তীর্নদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাহিরে রাখার এ প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ করছি আমরা। কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাছিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন কম্পিউটারে ৬মাসের কোর্সধারী নিবন্ধন উত্তীর্নদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহনের সুযোগ দানে যাবতীয় ব্যবস্থা নেবেন।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী
0Share