জিয়াউর রহমান চৌধুরী: ১২তম আন্তর্জাতিক ইকোলজি সম্মেলন অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন লক্ষ্মীপুরের কৃতি সন্তান মো. মাহমুদুল হাসান পবন। ২০ থেকে ২৫ আগস্ট, বেইজিংয়ের চায়না ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার অনুষ্ঠিত হবে এই বিশেষ সম্মেলন। ইকোলজিক্যাল সোসাইটি অব চায়নার আয়োজনে বিশ্বের মোট আড়াই হাজার ইকোলজিস্টের সাথে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবেন লক্ষ্মীপুরের মো. মাহমুদুল হাসান পবন। তিনি বর্তমানে সিলেটের শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশের কক্সবাজার ইনানী সংরক্ষিত বনানঞ্চলের বাশের বাস্তুসংস্থান নিয়ে গবেষণা করেছেন মাহমুদুল হাসান। আর এই গবেষণা বিশ্বজুড়ে বাঁশের গতি প্রকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়। এই গবেষণা থেকেই সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পান পবন। ছয়দিনের বিশেষ ইকোলজিক্যাল সম্মেলনে বিভিন্ন পর্বে বিশ্বের সেরা ইকোলজিস্টরা বক্তব্য দিবেন। পৃথিবীর বাস্তুসংস্থান নিয়ে কথা বলবেন তারা। সবচেয়ে মজার বিষয়, সেখানকার বাঘা বাঘা ইকোলজিস্টদের সামনে বাংলাদেশের ইকোলজিক্যাল গবেষণা নিয়ে উপস্থাপনা করবেন মাহমুদুল হাসান পবন। চীনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে প্রায় ১ হাজার পাউন্ড সহায়তাও পেয়েছেন ব্রিটিশ ইকোলজিক্যাল সোসাইটির কাছ থেকে।
গবেষণার বিষয়ে মাহমুদুল হাসান পবন লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে জানান, সংরক্ষিত বনানঞ্চলের আশপাশের মানুষের জীবনের সাথে বাশ-বনের সর্ম্পক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পরিবেশকে ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছি। আপনার শুনে অবাক হবেন, প্রকৃতিগতভাবে অনেক পরিবার ও তাদের কাজ-জীবধারণ বাশের ওপর নির্ভরশীল। আবার পরিবেশ-বনের ভারসাম্যেও বাশের প্রভাব আছে। এসব নিয়ে কাজ করেছি আমরা। চেষ্টা করেছি তৃণমূল মানুষ ও বাস্তুসংস্থানের খবর তুলে আনতে।’
ইনানীর গবেষণা ছাড়াও মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে থাকা অজগরের জীবনাচরণ ও গতিপ্রকৃতি নিয়েও গবেষণা করেছেন মাহমুদুল হাসান। দলীয় ওই গবেষণায়, অজগরের খাবার, চলাচল, বাসস্থান ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়। প্রায় এক বছর ধরে ট্রান্সমিটার ফলো করে অজগরের বিষয়ে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে।
মজার বিষয় হলো, এর মধ্যে একটি অজগরের নামকরণ করা হয়েছে ‘হাসান’। স্নাতক পড়ার সময় এক্সপ্লোয়ার ক্লাব অব ইউএসএ থেকে সামাজিক বনায়ন বিষয়ে গবেষণা করে ১ হাজার ডলার মূল্যমানের গবেষণা সহায়তা পান মাহমুদুল হাসান। এই গবেষণায়, সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে সঠিক প্রজাতি নির্বাচন ও স্থানভেদে গাছের কোন জাত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ভুমিকা রাখবে তা নিয়েও কাজ করেছেনা মাহমুদুল হাসান।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মোঃ আবুল বাশারের ছেলে হাসান লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মো. মাহমুদুল হাসান। পেশাগত জীবনে পরিবেশ গবেষণায় মনোনিবেশ করতে চান মাহমুদুল হাসান। পাশাপাশি, লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় মানুষের জলবায়ু পরিবর্তনগত ঝুকি নিরসনে কাজে লাগাতে চান নিজের অভিজ্ঞতা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সহায়তা পেলে উপকূলের লক্ষ্মীপুরের পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়েও ভবিষ্যতে কাজ করতে চান লক্ষ্মীপুরের এই কৃতি সন্তান।
0Share