নিজস্ব প্রতিবেদক: মাটিকাটার শ্রমিক নূরুল আমিনকে (৫২) গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও নাকে খত দিতে বাধ্য করার আলোচিত ঘটনায় হাইকোর্টে আবারও উপস্থিত হয়েছিল লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে শুনানি শেষ করা হয়েছে। আদেশের জন্য সোমবার (১০ জুলাই) দিন ঠিক করেছেন আদালত। লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার(এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদের সতর্ক করে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে, সোমবার (১০ জুলাই) চেয়ারম্যানকে আবারও উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও এ কে এম শহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটকারী আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. তাছেব হোসাইন। অপরদিকে চেয়ারম্যানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। ওসির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। ওসি মোক্তার হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যান আহসানুল কবির রিপন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) প্রতিনিধি হিসেবে রায়পুর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সবুজ মিয়া লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। এর আগে গত ৩ জুলাই ওই ওসি আর ইউপি চেয়ারম্যান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তাছেব হোসাইন বলেন, আদালতে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ও ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। এসপির প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এসপির প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আদালত। ওসিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানকে সোমবার ফের আদালতে হাজির থাকার জন্য বলা হয়েছে।সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওই আইনজীবী ওসির বরাত দিয়ে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলায় চাঁদাবাজি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে জেলা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। মামলার ৪ আসামিকে গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ‘এ কেমন বিচার!’ শিরোনামে গত ১৮ জুন কয়েকটি গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রকাশিত সংবাদ সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তাছেব হোসাইন জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। পরে ২১ জুন রিটের শুনানি করে হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিশ্বদেব চক্রবর্তীর অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে। স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আহসানুল কবির রিপন ২৮ মে গ্রাম্য সালিশে শ্রমিক নূরুল আমিনকে বাড়ি থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করেন। এ সময় তার (চেয়ারম্যান) নির্দেশে গ্রাম-পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম ওই শ্রমিককে ১১টি বেত্রাঘাত করে। অভিযোগকারী শহীদ ও তার স্ত্রীর পায়ে ধরে দুই দফায় ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পাননি তিনি। শহিদ নামে আরেক মাটিকাটা শ্রমিকের সঙ্গে বিবাধকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করলে তিনি ইউনিয়নের বড় আউলিয়া গ্রামে সালিশের আয়োজন করেন। সালিশের দুইদিন পর নুরুল আমিনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তির গোপনে ধারণ করা এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের সালিশি নির্যাতনের ভিডিওটি ১৬ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ২১ জুন চন্দ্রগঞ্জ থানার দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শিপন বড়ুয়া বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আহসানুল কবির রিপনসহ ৭ ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। রাতেই মামলার আসামি গ্রাম-পুলিশ জাহাঙ্গীর আলমসহ ৪ আসামিকে গ্রেফতার করে।
0Share