সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এ কোন দেয়াল সংস্কৃতিতে আমরা?

এ কোন দেয়াল সংস্কৃতিতে আমরা?

এ কোন দেয়াল সংস্কৃতিতে আমরা?

opinionসারোয়ার মিরন: রাজধানীর উত্তরায় রান্নাঘরের গ্যাস পাইপ লিক হয়ে ঘরে আগুন লেগে একটি পরিবারের মর্মান্তিক পরিণতির কথা আমরা সকলেই জেনে গিয়েছি ইতিমধ্যে। অগ্নিদগ্ধ ভদ্র মহিলা হাসপাতালের বেডে শুইয়ে কী বলেছেন তা কি শুনেছেন? সুমাইয়া নামের মহিলাটি বলেছেন:

“আমি চিৎকার করে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে নিচে নামতে থাকি। কেউ সাহায্য করল না। তিন ও চারতলার ফ্লোরে ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলল। আমাদের গায়ে আগুন দেইখ্যা ওরা দরজা বন্ধ করে দিল। আমরা তো সাততলা থেকে নামলাম। তিন বা চারতলায় তো আগুন লাগেনি। ওরা অন্তত একটা তোষক আমাদের গায়ে জড়াইয়্যা ধরতে পারত। তাগো নাহলে একটা তোষকই পুড়ত। নিচে নামলাম। দেখি চটের বস্তা ঝুলে আছে। টান মাইর‌্যা গায়ে জড়ালাম। দারোয়ানকে চিল্লাইয়্যা বললামথ আমার দুইটা ছেলে ওপরে আটকা পড়েছে। ওরা যাইতে যাইতে সব শেষ।”

অতি সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে বাবাসহ দুই ভাই। খবরে প্রকাশ, রান্নাঘরের চুলার গ্যাস লাইন লিক হয়ে দ্বগ্ধ হয় ঐ তিনজন। আরো একজন পোড়া শরীর নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ঢাকা মেড়িক্যালের বার্ণ ইউনিটে। হালকা সুস্থ হলে তিনি খুবই সীমিত আকারে বর্ননা করেছেন দুর্ঘটনার ভীবৎসতা। অবশেষে বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়ায়ে হেরে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুমাইয়া নামের সে নারীও। রেখে গেলেন একমাত্র শিশু জারিফকে। ঘটনার শিকার ঐ নারী শরীর আগুন নিয়ে সাত তলা থেকে নিচ তলায় চিৎকার করতে করতে নামলেও কেহ এগিয়ে আসেননি তাকে সহয়তা করতে। এমনকি একাধিক তলার বিভিন্ন ফ্লোরের কয়েকজন তার শরীরে আগুন দেখে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

হায় মানবতা!!! লজ্জিত আমরা। একজন দুর্ঘটনা কবলিত মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি ছয় বছর ধরে বসবাস করা পাশের ফ্ল্যাটের মানুষরা। শরীরে লেলিহান আগুন নিয়ে চিৎকার করেও পাননি কারো সাহায্য। কেহ কেহ দেখেও ভয়ে দরজা বন্ধ করে দেন!!!! এ কোন স্বদেশ আমার। এ কোন জীবন? এ কোন দেয়াল? এ কোন ইট পাথরের সং®কৃতি? এ কোন শহর আমার?

এ তো গেলো শহরের কথা। এবার একটু গ্রামের দিকে তাকান। প্রতিবেশি কিংবা অপরিচিত কেহ কোন ধরনের বিপদে বা দুর্ঘটনায় পড়লে তারা সাহায্য করতে হামলে পড়েন। রীতিমত প্রতিযোগিতা হয় কে কার আগে যাবে। নি:স্বার্থ ভাবে সাহায্য করে নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যে, অন্যের বিপদে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেই জীবন দিয়ে দিয়েছে। যেমন: কেহ পানিতে পড়ে গেলে, কারো বাড়ি-ঘরে আগুন লাগলে, কারো বাড়িতে ডাকাত পড়লে, কেউ এক্সিডেন্ট করলে, কেহ অসুস্থ হলে গ্রামের মানুষরা হামলে পড়ে সহযোগিতা করতে।

আমরা গ্রামের মানুষ। যে কারো বিপদে আপদে এগিয়ে যাই। খোঁজ খবর রাখি। সাহায্য সহযোগিতা করি। বিভিন্ন আয়োজনে নিমন্ত্রন জানাই। সকাল বিকাল বাজারে আড্ডা দেই। এক সাথে চা খাই। মসজিদে নামাজ পড়ি। আদর সমাদর করি। আপনজন ভাবি। আর ওরা শহরের মানুষ। তাদের কোন সমাজ নেই। আত্মীয় স্বজন নেই। পাড়া প্রতিবেশি নেই। তাদের কেবল কাজ আর কাজ। তারা কেউ কাকে চেনে না। তাদেরকেও কেউ চেনে না। তাদের বাসা বাড়ির প্রতিটিতে আছে দেয়াল। তাদের ফ্ল্যাটের দরজা থাকে বন্ধ। তারা আত্মকেন্দ্রিক। তাদের আছে কলাসিপল গেট। কেউ কারো নয় তারা। একই দালানে বহু বছর পার করলেও তারা কেউ কাকে জানে না, চেনে না। তারা যান্ত্রিক।

ওদের শহর ওটা। শহর বলেই পথে ঘাটে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় না কেহ। চোখের সামনে কেউ ছিনতাইকারী কর্তৃক আক্রান্ত হলেও অন্যরা এগিয়ে আসেনা। পাশের ফ্ল্যাটে কেহ মারা গেলেও খোঁজ পাওয়া যায়না। উৎসব পার্বনেও কেউ কারো দেখা পায়না। শহরের মানুষরা কেবল একা একা বাঁচতে চায়। আর এ একা একা বাঁচার অশুভ চেষ্টায় প্রতিনিয়তই ঘটে থাকে ধর্ষণ, গুম, খুন, হত্যাসহ মারাত্মক সব দুর্ঘটনার শিকার। তখন আর কেউ কাউকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনা।

ইট পাথরের দেশের মানুষ গুলো আপন ভুবনে ব্যস্ত থাকে বলে অনেক কিছুই তারা জানেন না। কোন দুর্ঘটনায় কিভাবে সহযোগিতা করলে রক্ষা পাওয়া যায় জানেন না সেসবও। জানেন না বিপদ আপদের প্রাথমিক প্রস্তুতি বা চিকিৎসা কিংবা প্রতিকারের ব্যবস্থাও। ওরা সাতার জানেনা, গাছে উঠতে পারেনা, এক দু তলা থেকে লাফ দিতে ওরা ভীষন ভয় পায়। সামান্য আঙ্গুল কাটা গেলেই ওরা আঁতকে ওঠে। উপস্থিত বুদ্ধি বা হিতাহিত জ্ঞানও ওদের অনেক কম।

শহরের মানুষ গুলোকে কংক্রিটের দেয়ালের পাশাপাশি অদৃশ্য অন্য আরো বহু দেয়ালে আবদ্ধ করে রেখেছে। যে দেয়াল ছিন্ন করা অনেক কঠিন। মুক্ত করা বহু জঞ্জালময়। এ দেয়াল বা ফ্ল্যাট সংষ্কৃতির অদ্ভদ ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাপন তাদের জীবনে ঢেকে আনছে বহু অঘটনের। পাশের ফ্ল্যাটের সাথে সুসম্পর্ক করার সময় নেই তাদের। ওদের ড্রয়িং রুম গুলো এখন হিন্দি সিরিয়াল গুলো দখল করে রেখেছে। মানুষ মানকিতা হারিয়ে তারা আত্মকেন্দ্রিকতায় ডুবে রয়েছে। সমাজ প্রতিবেশি আপনজন এখন আর তাদের কাছের কেউ না। অতি কাছের লোকেরাও দুরে থাকে। কেউ কারো নয় সব এমন পরিস্থিতি। কিন্তু এমন হচ্ছে টা কেন? এর যুতসই জবার খুঁজে বের করতে হবে।

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের আচরন কেন এমন জঘন্য হবে? মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এ নিয়ে ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। না হয় অদুর ভবিষ্যতে আমরা পাবো অন্ত:সার শুন্য এক আলখেল্লাময় জাতি। যাদের দ্বারা ভাতৃত্ববোধ কিংবা মানবিকবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হবেনা। কেবলই পরিবার, সমাজ ব্যবস্থা বিভাজন হতেই থাকবে। যা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারেনা। অপরাপর মানুষ হিসেবে এসব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বুঝতে হবে সমাজ ব্যবস্থায় একাকি জীবন যাপন কখনোই সুখকর হতে পারেনা। সুষ্ঠু ও সুন্দর সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনই কেবল নানা মুখী বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন, প্রতিবেশিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহন করাসহ সকল ধরনের সৌহাদ্যমূলক সম্পর্ক বিস্তারে সহায়ক এমন কাজ গুলো বেশি বেশি করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, অটুট ও দৃঢ় সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনই আমাদের পারস্পারিক কল্যান বয়ে আনতে পারে। বিচ্ছিন্নতা কখনোই না।

আমাদের যাবতীয় কর্মকান্ডে যে অদৃশ্য দেয়াল কিংবা শহুরে জীবনে বাস্তবিক ক্রংক্রিটের যে দেয়াল আমাদের মানবিকতা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। এটি করতে যত দেরি হবে ততই আমাদের জন্য, দেশের জন্য এমনকি আমি আপনি সবার জন্যই ক্ষতিকর।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও প্রভাষক  ব্যবস্থাপনা বিভাগ, খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ, নোয়াখালী।

sarwarmiran87@gmail.com

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com