কিশোর কুমার দত্ত: নিজের বিলাস বহুল গাড়ি অথবা যানবাহন বা পায়ে হেঁটে বাজারে যাওয়ার কথা। সেখানে জীবিকার তাগিতে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিয়ে নৌকার মাঝির অথবা টাকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে ওরা। কখনও কখনও সামান্য ঢেউয়ে নৌকা উল্টে যাওয়ার ভয়ও থাকে। তবুও প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে রওনা হতে হয় তাদের। আবার খোলা নৌকায় তীব্র রোদের তাপ সহ্য করতে হচ্ছে প্রতিদিনই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাজারে আসা যাওয়ার একমাত্র বাহন বলে আছে নৌকা। এভাবে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিছিন্ন চরের মানুষ ছোট-বড় নৌকা নিয়ে বছরের ১২ মাসই বাজারে আসা যাওয়া করে।
উপজেলার ৫নং চরআব্দুল্লা ইউনিয়ন যাতায়তের নেই কোন সড়ক যোগাযোগ। উপজেলার সাথে বিছিন্ন দ্বীপের দুরত্ব ১৬ কিলোমিটার। মধ্য খানে মেঘনা নদী। এরই মধ্যে ওই চরে আছে পুলিশ ক্যাম্প, প্রাইমারি ও হাই স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানের এবং ওখানে বসবাসরত লোকজন প্রয়েজনে নদী পারাপারে সারা বছরই নৌকা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি পাড়ি দিচ্ছে নদী।
নৌকায় বসে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম এর সাথে। তিনি বলেন, এই চরের মানুষরা ছোট-বড় নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে ১২ মাস আলেকজান্ডার বাজারে আসেন। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত ৩বার নৌকা ডুবে যায়। ২০০৩ সালে নৌকা ডুবে নারী-শিশুসহ ৪ জন মারা যায়। তবে বিলাঞ্চল হওয়ায় এখানকার ছোট-বড় মানুষ গুলো সাঁতার জানে। এ কারণে তেমন ঘটেনা কোন হতাহতের ঘটনা।
শীতকাল এলে নদীতে জোয়ার-ভাটাসহ পানিও কম থাকে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় ডুবোচর। তখন আবার ভিন্ন সমস্যা। কোন যান-বাহনতো চলে না। জোয়ার-ভাটার উপর নির্বর করে নদী পারাপারের সময়সুচী। অর্থাৎ নদীতে যখন জোয়ার এলে এখানকার মানুষ প্রয়েজনে বাজারে যায় এবং জোয়ার শেষ হওয়ার আগেই অথবা পরের জোয়ারের সময় তাদের গন্তবে ফিরতে হয়। পরের জোয়ার পেতে অনেক সময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত্রি নেমে আসে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা হওয়ায় টিফিন খায় না তারা। অপেক্ষা শুধু পথ চেড়ে থাকা প্রিয় মানুষ গুলোর হাতে কখন চাল, ডাল, তরি-তরকারী তুলে দিবেন।
স্থানীয় মোঃ আলমগীর নামের আর এক বক্ত্যি বলেন, অনেক সময় জোয়ার ভাটার অপেক্ষায় থাকায় দরিদ্র মানুষ গুলো ক্ষুধা নিয়ে বাড়ি আসে আবার ক্ষুধা বাড়ি ফিরে। কখনও কখনও পানি খেয়ে পেট ভরে রাখে। ফলে ভালো কিছু করার মনোযোগী হয়না। বাপ-দাদা থেকে জেলেরা জেলেই থেকে যায়। তা ছাড়া রোগ-আক্রান্তও হয় বেশি।
সরেজমিনে উপজেলার আলেকজান্ডার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুব ভোর অনুমানিক সময় তখন ৭টা। পাড়ে রাখা আছে ছোট- বড় নৌকা। তাড়াহুড়া করে নৌকায় উঠছে একদল মানুষ সাথে আমিও।
কখা হয় নৌকার মাঝির সাথে। তিনি বলেন, সকালে নদীতে ভাটা হয়েছে। এখন পানি কম থাকবে। তাই সকালে ওই পার চরগজারিয়া যাওয়ার সঠিক সময়। এই কারণে তাড়াহুড়া করে নৌকায় উঠছেন সবাই। আর তাড়াহুড়া করে উঠার কারণ জোয়ার-ভাটা। কখন জোয়ার এসে পানি বেড়ে যায় আবার ভাটা পড়লেও অনেক সময় সমস্যায় পড়তে তাদের।
0Share