সানা উল্লাহ সানুঃ বিশ্বে কম নারীই আছেন যারা একাকি ভিনদেশ ঘুরে বেড়িয়েছে। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নারী খুজেঁ পাওয়াই কষ্টকর হবে যিনি অন্তত ১০ দেশ ঘুরেছেন। অথচ একজন নারী হিসেবে একাই ৯৩টি স্বাধীন দেশ ঘুরে বিশ্ববাসী কে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নাজমুন নাহার। এ বছর শততম দেশ ভ্রমন করবেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী নারী যিনি এতগুলো দেশ ভ্রমনের রেকর্ড করেছেন। দেশ ঘুরেই ক্ষান্ত হননি তিনি। পৃথিবী বিভিন্ন মহাদেশের ৯৩ দেশেই উড়িয়েছেন বাংলাদেশী পতাকা। প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশের। শুধু নিজেই ঘুরে বেড়াননি। মাকে ও নিয়ে গেছেন ১৪ দেশে। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের সাথে কথা হয় নাজমুন নাহারের। সে কথার সুত্র ধরেই এ প্রতিবেদন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দুর্দান্ত এ নারী পরিব্রাজকের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নের গঙ্গাপুর গ্রামে। ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। মা তাহেরা আমিন। ৩ ভাই এবং ৫ বোনের মধ্যে নাজমুন নাহার সবার ছোট।
নাজমুন নাহার নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনী পাশের পর দালাল বাজার নবীণ কিশোর (এনকে) হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর কিছু দিন সাংবাদিকতা করেন। পরে ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যান সুইডেনে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।
ভ্রমণ শুরু হয় কিভাবে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নাজমুন নাহার লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে বলেন, ছোট বেলায় বাবার প্রেরণায় বইপড়া শুরু। সব ধরনের বই পড়তেন। তবে ভ্রমণবিষয়ক বইয়ে ঝোঁক একটু বেশিই। তা পাঠ্যবইয়ের ভ্রমণকাহিনি হোক কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো ভ্রমণ কাহিনী হোক।
২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য হিসেবে সুযোগ পান আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ গ্রহনের। সে সময় তিনি ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে যান। এটিই তাঁর জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমন বলে জানান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ৯৩তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন নিউজারল্যান্ড। আগামিতে আরো সাত দেশ ঘুরে ভ্রমনের সেঞ্চুরি করেই ক্ষান্ত হবেন তিনি। শততম দেশ হিসেবে তার তালিকায় আছে সাউথ আফ্রিকা।
ভ্রমনের খরচ কিভাবে যুগিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুল জীবন থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে কাজ করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা। সুইডওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় খন্ডকালীন চাকরি করেছেন। এগুলোই তার ভ্রমণ খরচের উৎস।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন সর্ম্পকে নাজমুন নাহার বলেন,
‘ইনসপিরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি । এর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন স্কুল ও অনাথ আশ্রমে যাবেন। বর্ণনা করবেন নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, ‘অসহায় শিশুদের মানুষ খাবার দেয়, নতুন জামা দেয়। কিন্তু আমি তাদের স্বপ্ন দেখাতে চাই। পৃথিবী দেখার স্বপ্ন। নিজেকে বড় ভাবার স্বপ্ন। আমি ভ্রমণের সময় অনেক মানুষ পেয়েছি, যারা কষ্ট করে বড় হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত আমি শিশুদের শোনাব।’ এ জন্য তিনি তথ্যচিত্র ও বানাবেন। তিনি চান এসব শিশুদের দেখালে তারা বাস্তব জ্ঞান পাবে।
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে সুইডেন প্রবাসী নাজমুন নাহার বাংলাদেশে এসেছেন গত ডিসেম্বরে। বর্তমানে ঢাকাতেই আছেন। শুক্রবার তিনি নিজ জন্মস্থান লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। রবিবার (৪ ফ্রেবুয়ারি) লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিজের জীবনের নানা পরিকল্পনা নিয়ে প্রেসব্রিফিং করবেন বলেন লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে নিশ্চিত করেন নাজমুন নাহার।
প্রসঙ্গত এর আগে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে ২০০৯ সালে এভারেস্ট জয় করেন লক্ষ্মীপুরে জন্ম নেয়া আরেক নারী নিশাত মজুমদার।
0Share