নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়েকদিন পরেই বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। নববর্ষকে বরণ করতে দেশ ব্যাপী চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি। দিনটিকে বরণ করতে আগ্রহের কোনো কমতি নেই দেশের গ্রামীণ জনপদেও। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ মাসজুড়ে গ্রামীণ জনপদের বিভিন্নস্থানে চলবে বৈশাখী মেলা। তাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্পীরাও ।
পহেলা বৈশাখে লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি pic.twitter.com/VQsONwZXYr
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) April 10, 2017
লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ও মৃৎশিল্পীদের তথ্যমতে, বৈশাখী মেলার অন্যতম আকর্ষণ মাটির তৈরি খেলনাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। তাই বৈশাখী মেলায় মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র বানাতে চৈত্র মাসের শুরু থেকেই ব্যস্ত হয়ে পরেছেন জেলার সদর, কমলনগর এবং রামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি কুমার পরিবার।
কাঁচামালের অভাব ও প্লাস্টিকের চাহিদা বৃদ্ধিতে লক্ষ্মীপুরে দিন দিন এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসলেও পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রিক এটি যেন আবার নড়েচড়ে বসে।
পহেলা বৈশাখে লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি pic.twitter.com/7TydmeBgdt
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) April 10, 2017
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ এলাকায় কুমার পাড়া। এখানকার আট-দশটি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। বৈশাখকে সামনে রেখে কুমার পাড়ায় মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুদের নানা ধরনের খেলনা। খেলনার মধ্যে রয়েছে- ষাঁড়, ঘোড়া, হরিণ, খরগোশ, হাতি, পাখি, ঘর, নৌকা, মাছ ও ব্যাংকসহ নানা শো-পিস।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন প্রতিবছর লক্ষ্মীপুর কালিবাড়ি, সামাদ মাঠ ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়ে বসবেন মৃৎশিল্পীরা। রঙ-বেরঙের মাটির খেলনা শিশুদের অন্যতম আকর্ষণ। পাড়ায় ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে ঘিরে মৃৎশিল্প কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েগুণ। দিন-রাত এখন তাদের ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। নারী-পুরুষ সবাই সমান তালে ব্যস্ত। উঠানজুড়ে খেলনা রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলছে রঙের কাজ, তুলির শেষ আঁচড়। বানানো শেষ হলে মৃৎশিল্পীরা পূজা সারবেন। এরপর মেলায় যাবে খেলনা সামগ্রী।
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) April 10, 2017
মৃৎশিল্পী পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি ঘরে বসে নেই ওইসব পল্লীর রমনীরাও। অবসরে বৈশাখী মেলার খেলনা তৈরির মাধ্যমে হাতে খড়ি দিচ্ছে পাল পাড়ার শিশুরাও। কুমার বাড়ির শিল্পীরা খেলনায় হরেক রকম ডিজাইন আর বাহারী রংয়ের ছোট-বড় খেলনা তৈরিতে এখন মহাব্যস্ত সময় পাড় করছেন। পহেলা বৈশাখ থেকে মাসজুড়ে এমনকি গ্রীস্মকালজুড়েই চলবে তাদের এই মাটির তৈরি খেলনার ব্যবসা।
পালপাড়া গ্রামের প্রবীণ মৃৎশিল্পী তরণী কান্ত পাল, জয়দেব পাল, মহাদেব পাল ও রানী পাল জানান, তারা প্রত্যেকেই মেলার জন্য মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করছেন। এরমধ্যে রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বামী বিবেকানন্দ, মহামানব হরিচাঁদ ঠাকুর, গণেশ পাগল, মা শারদা দেবীসহ দেশবরেণ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন সাইজের হাঁড়ি-পাতিল, মাটির ব্যাংক, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, বানর, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁস, ডিম, ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তাল ইত্যাদি। মাটির তৈরি এই সকল খেলনা ও তৈজসপত্র রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তাতে দেয়া হয় বিভিন্ন প্রকারের রং।
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) April 10, 2017
মেলার সময় ছাড়াও সারাবছরই তারা মাটির জিনিস তৈরি করেন। কুমোর পাড়ার এসব শিল্পীরা আরও বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষেরা এ পেশার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন, তাই তারাও পূর্ব পুরুষের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এখনও সেই পেশাকে আকড়ে রেখেছেন। তবে প্রজন্মের সন্তানেরা এখন তাদের পূর্ব পুরুষের পেশায় আসতে চাইছেন না।
পহেলা বৈশাখে লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি pic.twitter.com/X8KJeh3Ni3
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) April 10, 2017
বর্তমান বাজারে সিরামিক, প্লাস্টিক ও ধাতব তৈজসপত্রের সহজ প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতার জন্য তাদের মৃৎশিল্পের ব্যবসায় অনেকটাই ধ্বস নেমেছে। তবে যখন কোনো মেলা বসে তখন তারা মেলার জন্য খেলনা তৈরি করেন। এটা তাদের পরিবারের জন্য মৌসুমের একটা বাড়তি আয়। কুমোর পাড়ায় চৈত্র মাসের শুরু থেকে চলে মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরির কাজ। পুরো বৈশাখ মাসজুড়ে বিভিন্ন মেলায় তা বিক্রি করা হয়।
0Share