প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩। এ উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কালেক্টরেট ভবনের সামনে থেকে গরুর গাড়ি সাজিয়ে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বর্ষবরণ উৎসবে মিলিত হয়। এ সময় আয়োজন করা হয় এক আলোচনা সভা ও বাঙালির ঐহিত্যবাহী খাবার পান্তা ভোজের।
পরে সামাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বৈশাখের গান গাইলেন লক্ষ্মীপুর সদর আসনের এমপি একে এম শাহাজাহান কামাল, জেলা প্রশাসক মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো: ইউসুফ আলী,পৌর মেয়র আবু তাহের, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াছমিন লিকা, জাকির হোসেন ভৃঁইয়া আজাদ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে দর্শকরা তাদের হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিথিরা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ৩দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা পরিদর্শন করেন। এছাড়াও লক্ষ্মীপুরের স্কুল-কলেজসহ উপজেলাগুলোতেও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলাব্যাপী বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ১ বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩ বৈশাখ পর্যন্ত।
রায়পুর পৌর শহরের পশ্চিমের শেষ সিমান্তে ডাকাতিয়া নদীর পাড় ঘেষা পৌর মহাশ্বশানের বৈশাখী মেলাটি পাকিস্তান আমল থেকে পালিত হয়ে আসা দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পরিহার করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নানা বয়সী মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় এ প্রাঙ্গন প্রতি বছর। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ছোট্ট শিশুরাও মেতে ওঠে এ প্রাণের উৎসবে ।
এবার দিনের তাপমাত্রার কথা মাথায় রেখে সকালেই শিশুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। ভোর থেকেই স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে শিশুদের ছুটে বেড়ানো, নতুন বছর আলিঙ্গন করার নানা আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায়। উৎসব প্রিয় মানুষের পোশাকে ছিল বৈচিত্র।
কেউ পরেছেন লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, কেউবা লাল সবুজের মিশেল। মাথায় ফুল, হাতে মুখে আলপনা শোভা পাচ্ছে ছোটদের চেহারায়। সার্বজনীন এ উৎসবের দিনে সবার মধ্যেই ছিলো সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদকে রুখে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। এর মধ্য দিয়ে বছরের প্রথম দিনে সবাই আরও একবার প্রকাশ করেন তাদের আবহমান চেতনার কথা। এছাড়া শেকড়ের সন্ধানে নববর্ষকে বরণ করতে বৈশাখের তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে বর্ষবরণে মেতেছেন সবাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শারমিন আলমসহ পুরো অনুষ্ঠানে হাজারো উচ্ছ্বাসিত জনতার সাথে সারাক্ষণ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার ,মেয়র হাজী ইসমাইল খোকন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মকর্তা বৃন্দ।
২০০০ সালের আগে নববর্ষের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে উপজেলার আশেপাশের এলাকায় বিরাজ করত উৎসব মুখর পরিবেশ। বৈশাখী মেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজা অর্চণা করে দেশ ও জাতির সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করত। মেলায় সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ অনুষ্ঠিত হতো।
হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হলেও সেখানে মিলিত হত হিন্দু মুসলিম সবাই। ভ্রাতৃত্বের সেতু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মেলাকে সার্থকতার কাণায় কাণায় পূর্ণ করতে সবাই খাকত ঐক্যবদ্ধ। প্রতি বছর এ মেলার জন্য অপেক্ষা করেত এলাকার মানুষ। বাঁশ ও বেঁতের তৈরি নানা প্রকার গ্রহস্থলির সামগ্রী, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, হাঁড়ি, পাতিল, শীল, কড়াই, কলম, নানা প্রকার বাহারি পুতুল এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। মেলার পরিসর তিন দিনের হলেও পক্ষকাল ব্যাপী স্থায়ী থাকতো। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে এ মেলা তিনের বেশি স্থায়ী থাকেনি।
0Share