সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লাশ তোমার পরিচয় কি

লাশ তোমার পরিচয় কি

dead-bodyনূর মোহাম্মদ:  মৃত্যুর আগে একজন মানুষের অনেক পরিচয় থাকে, অনেক শুভাকাঙ্খী থাকে, থাকে তাঁর নাম পরিচয়। মৃত্যু হলে মানুষটির পরিচয় হয় লাশ হিসাবে। এটি একটি লাশ। এর ঠিকানা কবরস্থান। সেটা যেখানেই হোক। কিন্তুু একটি মানুষ যখন হত্যার শিকার হয়। অথবা দুর্ঘটনায় এমন জায়গায় মারা যায় যে খানে তাঁকে কেউ চিনেন না, তাহলে সে লোকটি কি অজ্ঞাত লাশ হিসাবেই থেকে যাবে?

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের নলডগী গ্রামে মা ও সন্তানের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। বেওয়ারিশ/ অজ্ঞাত হিসাবে দাফনের এক সপ্তাহ পার হওয়ার পর পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় উক্ত লাশগুলোর পরিচয় পাওয়া যায় এবং উক্ত ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) নাসিম মিয়া আমাদের অবগত করেছেন। কিন্তুু ইতিমধ্যেই লাশগুলো কংকালে পরিণত হওয়া শুরু করেছে। কিন্তুু বিশেষ কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে যদি তাদের পরিচয় পাওয়া যেত তবে কবরে যাওয়ার আগেই আত্মীয়া লাশ ফিরে ফেতো এবং অপরাধীরা দ্রুত সনাক্ত হয়ে আইনের আওতায় আসতো।

আমাদের দেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হত্যা, গুম, খুন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানান কারণে মানুষ মারা যায় অথবা মেরে ফেলা হয়। মৃত এই লাশগুলো অজ্ঞাত পরিচয় হিসাবে দাফন করা হয়। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালেই এই অজ্ঞাত লাশ আবিস্কারের সংবাদ পাওয়া যায়। পত্রিকার শিরোনাম থাকে অজ্ঞাত যুবক উদ্ধার, অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার, অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার। এই অজ্ঞাতদের তালিকা দিনকে দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে।

এই ক্ষেতে আমরা রাণা প্লাজায় মৃত মানুষ গুলোর উদারণ দিতে পারি অথবা নদীতে ট্রলার/ জাহাজ ডুবিতে মৃত মানুষগুলোর কথা ভাবতে পারি। এই দুর্ঘটনাগুলোতে যে মানুষগুলোকে অজ্ঞাত হিসাবে কবর দেওয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে তারাকি অজ্ঞাত হিসাবে এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিল? নিশ্চই নয়, তবে কেন তারা অজ্ঞাত হিসাবে কবরে যাবে।

আমরা দেখি কখনো কখনো আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পাওয়া যায়, তখন মৃত ব্যক্তিটি আর লাশ থাকেনা, কংকালে পরিণত হয়। এই কংকাল নিয়ে আবার ময়নাতদন্ত হয়, শুরু হয় নানান গবেষণা।

কিন্তুু এই অজ্ঞাত পরিচয় লাশের পরিচয় উদঘাটন করা কার দায়িত্ব। সর্বনিম্ন কত সময়ের মধ্যে লাশটির পরিচয় উদঘাটন করা যায়। তা নিয়ে আমরা কখনো কি ভেবেছি। যদি ভেবে থাকি তাহলে কোন উপায় কি আবিস্কার করেছি। যা দিয়ে অজ্ঞাত লাশের সহজেই পরিচয় পাব।

অজ্ঞাত লাশটির পরিচয় পাওয়ার আগে তাঁকে কেন আমরা কবরস্থ করছি? অজ্ঞাত মৃতদেহটি সংরক্ষণ করে তাঁর পরিচয় ও মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের পরেই কবর দেওয়া উচিত। অতে করে সহজেই মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব। খুনী ধরা পড়ে, অপরাধীর সাজা হয়। অজ্ঞাত লাশটি জ্ঞাত হিসাবে আত্মীয় স্বজনের কাছে ফেরত যেতে পারে। কারণ এই অজ্ঞাত লাশটি কারো না কারো আত্মীয়, কারো ছেলে, কারো মেয়ে, কারো মা অথবা কারো বাবা । মৃত্যুর পর লাশ ফিরে না পাওয়ার যন্ত্রণাটুকু কেবল তারাই অনুভব করতে পারে যারা মৃত্যুর পর আত্মীয়ের লাশটি পায় না, কবর দিতে পারে না, তাঁর জন্য প্রার্থনা করতে পারে না।

যখন তাকে স্থানীয়রা কেউ না চিনে, তখন এই লাশের পরিচয় হয় অজ্ঞাত লাশ। তাকে থানা, পুলিশ, হাসপাতাল, মর্গ, লাশঘর, কাটা-ছেঁড়া অনেক ঠিকানায় তাঁকে যেতে হয়। তারপর তার ঠিকানা হয় কবর নামক জায়গাটিতে যে খানে সবাই শেষ ঠিকানা হিসাবে শায়িত হয়।

নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। সেখানে আমার প্রিঙ্গার প্রিন্ট আছে। এই প্রিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে কেন লাশগুলোকে সনাক্ত করা হয় না। জাতীয় পরিচয় পত্র শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ নেওয়া, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া ইত্যাদি সামান্য ও মামুলি কিছু কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তা হলে এই প্রিঙ্গার প্রিন্টের মুল্য কি। এই প্রিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে মানুষকে সনাক্ত করা, অপরাধীকে সনাক্ত করার জন্য কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না।

এই দায় কার, এই দায় কে নিবে, এই দায় কি আমার রাষ্ট্রের নয়, কারণ অজ্ঞাত লাশটির মানুষ এই দেশেরই একজন নাগরিক, একজন সন্তান, রাষ্ট্রের সন্তান। সন্তান যখন মারা যায় তখন পিতা কিভাবে মৃত সন্তানকে অজ্ঞাত হিসাবে কবরস্থ করে। পিতার কেন মনকষ্ট হয় না। পিতা কেন তার সন্তানকে ঠিকানাবিহীন মানুষ হিসাবে কবর দেয়। পিতা কেন এর কোন সমাধান খুঁজে বের করেন না।

রাষ্ট্র নামক এই পিতার কাছে আমার অনুরোধ, পিতা দয়া করে আপনি আর আপনার কোন সন্তানকে অজ্ঞাত লাশ হিসাবে কবর দিবেন না। সন্তান হিসাবে পিতার নিকট এইটুকু আশা বেশী কিছু নয়। আজকের পর থেকে দয়া করে আপনার কোন সন্তান যেন অজ্ঞাত হিসাবে কবরে না যায় পিতার নিকট এই প্রত্যাশাই রইল।

লেখক: মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী/ নির্বাহী পরিচালক, ইসোলপ।

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com