আতোয়ার রহমান মনির: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ‘চন্দ্রগঞ্জ’ শীর্ষ কয়েক সন্ত্রাসীর আস্তানা ‘রক্তাত্ব জনপথ’ নির্মূলে থানা হলেও দীর্ঘ দেড় বছরে এ ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা ঘিরে বসবাসরত (৯ টি ইউনিয়নের) প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় গড়ে উঠেনি সরকারি হাসপাতাল। এখানকার মানুষ সন্ত্রাস নির্মূলের চেষ্টায় শান্তির পথ দেখলেও চিকিৎসা সংকটে রয়েছে চরম দুর্ভোগ। ‘চন্দ্রগঞ্জ’ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রকে ২০ শয্যা করে সরকারি হাসপতালের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সমাজ সেবক আইনুল আহমেদ তানভীর জানান,শীর্ষ সন্ত্রাসী কয়েকজনের আস্থানা ছিল এ লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চল কবলিত ‘চন্দ্রগঞ্জ’ ।সে সময়ে মানুষের দিন কাটছে চরম আতংকে।খুন,অপহরণ,চাঁদাবাজি,সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল চন্দ্রগঞ্জের ৯ টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ।
মানুষের দু:খ দূর্দশাও শান্তির কথা ভেবে ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানার রুপকার ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন ‘চন্দ্রগঞ্জ’ উন্নয়নে থানা করা প্রস্তাবনাটি সরকারের উচ্চ মহলে পাঠান। পরে বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল মন্ত্রিসভায় বৈঠকে পাস করেন ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা। ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা কার্যক্রম চালু হয় ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর তারিখে।
জানাগেছে, ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা গঠনের পর অবৈধঅস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ সন্ত্রাস নিমূর্লসহ হত্যাকারিদের গ্রেফতারে বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার শাহ্ মিজান সাফিউর রহমান। তিনি সন্ত্রাস নির্মূল অব্যাহত আন্দোলনে রক্তাত্ব জনপথ এখন শান্তির জনপথে পরিনত হলেও চিকিৎসা সংকটে মানুষের মনের সুখ কেঁড়ে নিয়ে গিলে খাচ্ছে অর্থ।
দীঘলী ইউনিয়নের উত্তর খাগুরীয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের স্ত্রী ছালেহা বেগম (৫০) জানান, ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা হওয়াতে ধনীদের সম্পদ রক্ষায় বেশি উপকার হয়েছে। আর আমাদের গরীবের জন্য থানা হওয়ায় কি আর উপকার? হ্যা,তবে থানার পাশাপাশি সরকারি একটি হাসপাতাল হলে বিপদে কাজে আসতো আমাদের।
একই এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহেরা বেগম (৭০) বলেন,অসুখ বিসুখ আছে, কি আর করা। চিকৎসার জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপতাল ১৭/১৮ কিলোমিটার দূরত্বে যাবো তাও রাস্তাঘাট ভাঙ্গাচুরা । ‘চন্দ্রগঞ্জ’ সরকারি হাসপাতাল থাকতো তা হলেও তো কতই না ভাল হতো।
‘চন্দ্রগঞ্জ’ -লক্ষ্মীপুরে সড়কে নিয়মিত চলাচল কারি স্কুল শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, সড়কটি প্রস্থতা বৃদ্ধি না করায় প্রায় ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। আর এ সড়কেই ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানায় সরকারি হাসপতাল না থাকায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল দূরতের¡ কারনে গত একমাসে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হলেও হাসপাতালে নেয়ার পথে সময় বেশি লাগায় ৫ জনের মৃত্যু হয়।এর মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত বাবুল হোসেন সিকদারের বাড়ী ভোলা চেয়ারম্যানহাট এলাকায়।
অপরদিকে ‘চন্দ্রগঞ্জ’ হতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপতালে চিকিৎসা নিতে নবম শ্রেনি পড়–য়া এক রুগী আত্মীয় তার নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে তার বোন তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে বিষপান করে। ‘চন্দ্রগঞ্জ’ হতে লক্ষ্মীপুর সরকারি হাসপাতাল আনতেই কষ্ট হয় তাদের। পরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপতালে ভর্তিকরার পূর্বে মারা যায় তার বোন। তার মতে ‘চন্দ্রগঞ্জ’ সরকারি হাসপাতাল চালু করলে এমনটি হতনা তার বোনের। বিষয়টি স্বাস্থ্যবিভাগের লোকজন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান, ওই ছাত্রী।
দত্তপাড়া এলাকার গৃহিনী রেহেনা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ তার পায়ে গাঁ দেখা দিয়েছে, তাই চিকিৎসা জন্য তিনি লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে এসেছেন। সকাল ১০টায় আসলে ও ডাক্তারের চেম্বারে তালা ও ডাক্তার আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে তাকে। পরে তিনি ওষূধ পেলেও গাইনি ডাক্তার না পেয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল যেতে হয়েছে তাকে। পার্শ্ববতী এলাকা ‘চন্দ্রগঞ্জ’ সরকারি হাসপাতাল ও ড্ক্তাার থাকলে তাকে ঢাকা যেতে হতো না বলে জানান তিনি।
‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও বিএনপি নেতা আব্দুল হান্নান ভূইয়া জানান,চিকিৎসা সেবা নিতে ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা থেকে সদর উপজেলায় যেতে দূরত্ব ১৬ কিঃমিঃ,নোয়াখালীর বেগমগ্ঞ্জ যেতে দূরত্ব ১২ কিঃমিঃ,উত্তরে চাটখিল যেতে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার।এ দূরত্ব মধ্যে ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানা ঘিরে ‘চন্দ্রগঞ্জ’, হাজীরপাড়া, দীঘলী, বশিকপুর, দত্তপাড়া, মান্দারী, চরশাহী, কুশাখালী, উত্তর জয়পুর ইউনিয়’নে বসবাস করে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। এখানকার চিকিৎসা প্রাপ্তী সাধারণ মানুষের জন্য দূরত্ব হওয়ায় চিকিৎসা নিতে গিয়েই প্রান দিতে হচ্ছে অনেককে।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন জানান, ‘চন্দ্রগঞ্জ’ থানায় সরকারি বিভিন্ন কর্মকান্ডে অনেক উন্নয়ন হলেও শুধু পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য সেবা। এখানে যদি সরকারি একটি হাসপতাল স্থাপন করা হয়,জনগণের দূর্ভোগ কাটবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের নিকট আশা করেন দ্রুত একটি হাসপাতাল স্থাপন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো.গোলাম ফারুক ভূইঁয়া জানান, ‘চন্দ্রগঞ্জ’ এলাকায় হাসপাতাল করতে তিন একর জায়গার প্রয়োজন।বিষয়টি স্থানীয় এমপি মহোদয় চেষ্টাকরলে ২০ শয্যা না হলে ১০ শয্যা করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
0Share