নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের বাঁধের গোড়ার বেদে পল্লীতে চলছে ইয়াবাসহ মাদকের রমরমা ব্যবসা। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী চন্দ্রগঞ্জ থানার উপকন্ঠে বাঁধের গোড়া নামকস্থানে দীর্ঘ ২০ বছর আগে এখানে একদল বেদে বসবাস শুরু করে। এখন এ বেদে সমাজের অনেকেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। পাশাপাশি চন্দ্রগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী ওয়াপদা খালের দক্ষিণ পাড়ে ভবভদ্রী গ্রাম এখন ইয়াবা পল্লী হিসেবে পরিচিত। বেদে পল্লীর একাধিক ঝুঁপড়ি ঘরে এবং ভবভদ্রী গ্রামের অন্তত ১০টি স্পটে রাতভর চলে ইয়াবাসহ মাদকের অবাধ বেচাকেনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামলেই এই দুটি স্থানে মাদকসেবীদের ব্যাপক আনাগোনা। রাতভর মোটরসাইকেল হাকিয়ে মাদকসেবীরা এসব স্পট থেকে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক কিনে আবার নিরাপদে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মোটরসাইকেল নিয়ে মাদকসেবীদের বেপরোয়া যাতায়াতে এই এলাকার অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়।
জানা যায়, বাঁধের গোড়ার বেদে পল্লীর বাবুল ওরফে গুটি বাবুল ওরফে স্ক্রাপ বাবুল, কামাল ওরফে কসাই কামাল, ফকির ওরফে ভান্ডারী ফকির, ফাতেমা, নুরজাহান ওরফে কালি, মোতালেব, রুবেল ওরফে মোস্তবা, ভবভদ্রী গ্রামের মাসুদ, সেলিম, কোয়ারিয়া গ্রামের সবুজ, লিটনসহ এরা সবাই আলাদা আলাদা ইয়াবাসহ মাদক বিক্রির আখড়া খুলে বসেছে।
এর মধ্যে কোয়ারিয়া গ্রামের সবুজ গত কয়েকদিন আগে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন জেলহাজতে রয়েছে। ভবভদ্রী গ্রামের মাসুদ কিছুদিন আগে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে এসে এখন আবারও আগের মাদক ব্যবসা শুরু করেছে। মূলত এসব মাদক ব্যবসায়ীরা দুই জেলার সীমান্তবর্তী চন্দ্রগঞ্জ বাঁধের গোড়া ও ভবভদ্রী গ্রামটিকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে মনে করে। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ অভিযান চালালে তারা নোয়াখালী সীমানায় আশ্রয় নেয় আর নোয়াখালীর পুলিশ অভিযান চালালে লক্ষ্মীপুর সীমানায় আশ্রয় নেয়। গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই তারা এ কৌশল নিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
এদিকে ইয়াবাসহ মাদকের নীল ছোঁবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই এলাকার ছাত্র ও যুবসমাজ। মাদকাসক্ত এসব ছাত্র ও যুবকরা নিজের পরিবারের কাছে এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ইসমাইল, রুবেল ও সংকর নামে মাদকাসক্ত তিন যুবককে কুমিল্লার মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে চার মাস চিকিৎসা করিয়ে এনেছেন তাদের অভিভাবকরা। চিকিৎসা করিয়ে আনলেও এসব যুবকরা আবারও নেশার জগতে হাবুডুবু খাচ্ছে। এর মধ্যে ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তানরাই বেশি মাদকে জড়িয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, তার বড় ছেলে মাদকাসক্ত। তিনি প্রতিদিন ছেলের নেশার জন্য নিজেই তার বালিশের নীচে টাকা রেখে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি বলেন, আমার ছেলেটি ডিগ্রী পাশ। কিন্তু নেশা করার কারণে কোনো চাকুরীতে সে স্থায়ী হতে পারেনি। এখন নেশা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে বলে তার দুচোখে কান্না চলে আসে।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের পুলিশ প্রশাসন এবং র্যাবের যৌথ অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
0Share