তাবারক হোসেন আজাদ: রায়পুরে তিন শিক্ষা কর্মকর্তা সহ ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ৭৩ জন সহকারি শিক্ষক না থাকায় প্রশাসনিক কাজে চরম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ১১ বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকায় শিশুরা যেমন খেলা থেকে বঞ্চিত তেমনী তাদের অভিবাবকরা অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। এতে করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত কয়েক বছর নিয়োগ পদন্নতি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।
রোববার শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৌরসভা সহ ১০টি ইউনিয়নে ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ৯৭ জন প্রধান শিক্ষক ও ৬৩৮ জন সহকারী শিক্ষকসহ প্রথম শ্রেনি থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ১২২ জন। গত ২৮ জুলাই ২০১৫ থেকে প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা, গত ৪ বছর ২ জন সহকারি শিক্ষ কর্মকর্তা এবং গত ১০ বছর ২৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ৭৩ জন সহকারি শিক্ষক নেই গত ৩ বছর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৌরসভা সহ ১০ ইউনিয়নে ১১টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাসহ পাঁচজন সহকারীর শিক্ষা কর্মকর্তার পদ থাকলেও কর্মরত আছেন তিনজন। গত ছয় মাস অন্য পদগুলো শূন্য রয়েছে বা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের প্রশাসনিক কাজ চরম ব্যাহত হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষকবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বেপারীরচর, চরপক্ষী, পূর্ব চরলক্ষী, পশ্চিম চরলক্ষী, উত্তর চরলক্ষী, সিকদার কান্দি, চরকাছিয়া, চরমোহনা, দক্ষিণ চরমোহনা, চরমোহড়া, পূর্বসোনাপুর, রাখালিয়া আহাম্মদিয়া, চরবগা, গোলকপুর, চরপাতা, চরপাতা গাছিরহাট, উত্তর চরপাতা, কেরোয়া, পশ্চিম কেরোয়া, দক্ষিণ পূর্ব কেরোয়া, মধ্য কাঞ্চনপুর, সাগরদী, উত্তর বামানী আলআমিন ও পশ্চিম সাগরদী সহ ২৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। খেলার মাঠবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- শায়েস্তানগর, বালিকা, সোনাপুর, মধ্য কেরোয়া, উত্তর পশ্চিম কেরোয়া, উত্তর চরপাতা, বেপারীর চর, দক্ষিণ রায়পুর বি.এন, রোকেয়া মেমোরিয়াল ও পশ্চিম সাগরদি সহ ১১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে চরপাতা গাছিরহাট ও সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক শারমিন আক্তার ও শামছুন নাহার মুক্তা বলেন, বিদ্যালয়ের পাঠদানের ফাঁকে শিশুরা খেলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু খেলাধুলা না থাকলে শিশুদের মানুষিক বিকাশ ঘটানো যায়না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক ও মাঠ না থাকায় তাদের শিশুদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেন।
সহকারি শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষকদের অভিভাবকদের হলেন শিক্ষা অফিসার। আর বিদ্যালয়ের অভিভাবক হলেন প্রধান শিক্ষক। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন না থাকায় প্রতিনিয়ত প্রশাসনিক কাজে খুব সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে আামাদের। এসব কর্মকর্তাদের শূন্য পদ পূরনে একাধিকবার আবেদন করেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন সাড়া দিচ্ছে না। অন্যদিকে ১১টি বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকায় খেলা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন আমাদের করার কিছুই থাকে না। স্থানীয় দানশীল ব্যাক্তিরা বিদ্যালয়ের পাশে মাঠের জন্য কিছু জমি দান করলে উপকার হতো।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা ফেরদোউসী বলেন, তিন শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ২৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ১১টি বিদ্যালয়ে মাঠ সৃষ্টির ব্যাপারে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে নিয়োগ ও পদন্নতি বন্ধ থাকায় শূন্য পদগুলি পূরন করা যাচ্ছে না। সাময়িকভাবে প্রশাসনকি কাজ ও শিশুরা কষ্ট করলেও আমাদের কিছুই করার নেই। তবে শিক্ষার হার ৯৯.০৮% বলে দাবি করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মাষ্টার আলাতাফ হোসেন হাওলাদার বিএসসি বলেন, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে তিনজন শিক্ষা কর্মকর্তা সহ শিক্ষকের পদ পূরনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আলোচনা করা হবে।
0Share