নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০০৭ সালে ঢাকার রায়ের বাজার বস্তিতে দরিদ্র শিশুদের নিয়ে প্রথম অনলাইন স্কুল শুরু করে গ্রামীণফোন ও জাগো ফাউন্ডেশন । এর ধারাবাহিকতায় এবার লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর গোসাইয়ে চালু হয়েছে গ্রামীনফোনের অনলাইন স্কুল ।
লক্ষ্মীপুর ছাড়া ও বর্তমানে লক্ষ্মীপুর, রায়ের বাজার, গাজীপুর, টেকনাফ, বান্দরবন, লালখান বাজার, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জের চা বাগান পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় ১০টি স্কুল রয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের শুরুর দিকে গাজীপুরে গ্রামীণফোন দেশের প্রথম অনলাইন স্কুল চালু করে। পরে ঢাকার দুটি এলাকায় আরও দুটি স্কুল চালু করে অপারেটরটি।
চর গোসাইয়ে গ্রামীনফোনের অনলাইন স্কুলঃ
৪ থেকে ৬ বছর বয়সী ৩৮ জন ছোট ছোট শিক্ষার্থী লাইন ধরে গাইছে ‘আমরা সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’। বিজয়ের মাসে বাচ্চাদের গাওয়া এই গান হৃদয়ে নাড়া দেয়। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে অবাক হতে হল। গ্রামের স্কুল এতটা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হয়!
শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করে দেখা গেলো, শিক্ষার্থীদের সবাই সামনের একটি বড় মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। মনিটরে দেখা যাচ্ছে, এক শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের পাঠ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ওই শিক্ষিকা মূলত ঢাকায় বসে ক্লাস নিচ্ছেন, আর তার কথা রামগতির চর গোসাই গ্রামে অবস্থিত এক স্কুলে বসে ক্ষুদে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা শুনছেন।
এদেশে অনলাইন স্কুল ধারণাটি নতুন। এ ধরনের স্কুলে দূরবর্তী কোনো এলাকা থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হয়। চর গোসাইয়ের স্কুলটিতে ঢাকার রায়ের বাজার থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে থাকেন।
তবে স্কুলটিতে শিশুদের পরিচর্যা ও স্কুল পরিচালনার জন্য দুই জন টিচার নিযুক্ত করা হয়েছে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হলেও ওয়েব সফটওয়্যারটি বেশ ইন্টার্যা ক্টিভ হওয়াতে শিশুরা সহজেই শিখতে পারছে।
৬ বছর বয়সী আনন্দ কর্মকারের মা লিপি মজুমদার জানান, তার স্বামী কামারের কাজ করেন। কিন্তু তিনি চান, সন্তান যেন শিক্ষিত হয় এবং পড়াশুনা করে ভালো চাকরি করে। তাই তিনি এই স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করিয়েছেন।
আরমান হোসেন এক ছাত্র জানায়, স্কুলটি তার অনেক ভালো লাগে। প্রতিদিন সকালে উঠে স্কুলে আসে। কখনো কেউ মারে না, পড়া না পারলে বুঝিয়ে দেয়।
প্রজেক্ট অফিসার মুহাম্মদ নাইম জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর গোসাইয়ে এই অনলাইন স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে এলাকায় মাইকিং এবং অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝানো হয়। তারপর যাচাইবাছাই শেষে ৩৮ জনকে এই অনলাইন স্কুলে ভর্তি করা হয়।
জাগো ফাউন্ডেশনের সহকারী ম্যানেজার কামরুল কিবরিয়া জানান, বিনা বেতনে এ স্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফলে অভিভাবকদের কোনো ব্যয় বহন করতে হয় না। নিজেদের খাতা-কলম, বই কোনো কিছুই কিনতে হয় না। শিক্ষার পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন পুষ্টিকর খাবারসহ সাবান, শ্যাম্পু, হাইজিন প্রডাক্ট, ইউনিফর্ম, ব্যাগ, জুতা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হলে খাতা ডাকযোগে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা থেকে শিক্ষকরা সেই খাতা দেখে আবার তা স্কুলে পাঠান।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের কমিউনিকেশনস বিভাগের হাফিজুর রহমান খান জানান, শুধু গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ অনলাইন স্কুলের ওপর অনেক জোর দিয়েছে। এ কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া হবে। তবে প্রকল্পটি নিয়ে এখনো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, কিভাবে আরও উন্নতি করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী দেয়ার জন্য সরকারি অনুমোদন পেয়েছে স্কুলটি।
দ্রুতই ক্লাস এইট ও এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনুমতি পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অনুমতি পাওয়া গেলে এই অনলাইন স্কুল থেকেই এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
গ্রামীণফোনের কমিউনিকেশন বিভাগের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা শওকত ইমাম জানান, প্লে আর নার্সারির সমন্বয়ে ‘রিসেপসন’ থেকে ভর্তি শুরু হয়। এরপর যথা নিয়মে কেজি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হবে।
বর্তমানে ১০টি স্কুলে ৬৯০ জন শিক্ষার্থী, ২৩ জন অনলাইন টিচার ও ৪৬ জন ফিজিক্যাল টিচার-মেনটর রয়েছেন। অনলাইন স্কুলে তুলনামূলকভাবে ঝরে পড়ার সংখ্যা কম।
অনলাইন স্কুলগুলোতেও ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ড বাংলাদেশ সিলেবাসে স্কুলের পাঠদান হয়ে থাকে। স্কুলটিতে গ্রামীণফোন বিশেষ ইন্টারনেট সংযোগের পাশাপাশি দিচ্ছে আর্থিক যোগান। আর অগ্নি সিস্টেম নামের একটি প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে আইটি সাপোর্ট।
0Share