আতোয়ার রহমান মনির: এখন শুরু হয়েছে আষাঢ় মাস, চলছে থেমে থেমে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি। মেঘনায় জাল পেতে নদীতে ইলিশের দেখা না পাওয়ায় খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। জোয়ারের পানিতে প্রতি বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে নদনদী ও সাগরে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এখন ইলিশের ভর মৌসুম হলেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে চলছে ইলিশের আকাল। জেলেরা বলছেন, জ্যৈষ্ঠ থেকে ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও আষাঢ়েও দেখা মিলছে না ইলিশের!
মেঘনা নদী নির্ভরশীল সরকারি তালিকায় ৩৬ হাজার সাতশ’ জেলে থাকলেও নদী ও মাছের ওপর নির্ভরশীল ৪০ হাজার জেলে। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে চলে তাদের দৈন্দিন জীবন। মেঘনা নদী ঘিরেই চলে তাদের জীবন। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে এসব জেলে ইলিশ আহরণ করেন। আষাঢ়ে বৃষ্টি শুরু হলে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে থাকে নদীতে। এ সময় জেলেদের জালে ধরা পড়ে প্রচুর ইলিশ। কেনাবেচায় সরগরম হয় মাছের ঘাটগুলো। এবারের চিত্র উল্টো।
দিন-রাত খাটুনি করেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। নদীতে মাছ না পাওয়ায় ইলিশনির্ভর উপকূলীয় জেলেদের মুখে হতাশার ছাপ পড়ছে স্পষ্ট। নদীতে মাছ না পেয়ে প্রতিনিয়ত খালি হাতে ফেরত এসে নতুন করে অন্য পেশায় জড়িত হতে না পেরে দুস্থ এসব জেলের ঘরে তীব্র হচ্ছে দারিদ্র্য। এ চিত্র জেলার মজুচৌধুরীর হাটসহ মেঘনার রামগতি উপজেলার গজারিয়া, বয়ারচর, চর আবদুল্লাহ, তেলিরচর, আলেকজান্ডার, রায়পুর উপজেলার জালিয়ার চর, পানিরঘাট নদী এলাকা।
কথা হয় চল্লিশ বছর বয়সের জেলে আবু নাছেরের সঙ্গে। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার শিক্ষা গ্রামের জেলে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলেছেন। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে যখন বাড়ি ফিরছেন তখন দেখেন তার মাছের ডালা প্রায় খালি।
রামগতি মাছঘাটের ব্যবসায়ী মিনাজ মাঝি জানান, গত বছর এ সময় ঘাট থেকে প্রায় দুইশ’ টন ইলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যেত। এ বছর মাছ নেই।
কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকার জেলেরা জানান, নদীতে মাছ নেই। সারাদিন জাল ফেলে দু’একটি ইলিশও জোটে না। এখন তারা ধার-দাদনের দেনা শোধের দুশ্চিন্তায় আছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচএম মহিব উল্যাহ বলেন, নদীর নাব্য হ্রাস, পানি দূষণ, ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচলসহ নানা কারণে মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস এবং শুকনো মৌসুমে বিল বা ছোট নদী সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে মাছ কমে গেছে।
0Share