মিসু সাহা নিক্কন: রামগতি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক সাধারন মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছেন একজন মেডিকেল অফিসার। দীর্ঘদিন পর্যন্ত চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারের পদটি শুন্য। মেডিকেল অফিসারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে চরগাজী ও চর রমিজ ইউনিয়নের সাধারন মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরমধ্যে চরগাজী ইউনিয়নের ৪২ হাজার ৮শ ৯০ জন, চর রমিজ ইউনিয়নের ৪২ হাজার ৭শ ৩৯ জন ও বড়খেরী ১৫ হাজার ৫শ ৭৯ জন সাধারন মানুষ। বড়খেরী ইউনিয়নের মানুষের জন্য রয়েছে একজন মেডিকেল অফিসার আর বাকি ইউনিয়নের লোকজন বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ঔষধের দোকান থেকে দোকানদারদের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ সেবন করছে। কেউ ভালো হচ্ছে, কেউবা তার রোগ নিয়ে নোয়াখালী কিংবা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এইভাবেই চলছে রামগতি উপজেলার এসব ইউনিয়নের খেটেখাওয়া মানুষের জীবন ব্যবস্থা। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা অন্যতম আর এই স্বাস্থ্য সেবা থেকেই বঞ্চিত ওই ইউনিয়নের মানুষগুলো।
সরেজমিনে চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় মেডিকেল অফিসার ছাড়াই চলছে ঢিলেঢালা ভাবে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। চররমিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে দেখা যায় আরেক চিত্র পদটি থাকা সত্বেও নামমাত্র চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। মেডিকেল অফিসার সিডিউল মোতাবেক সাপ্তাহে একদিন আসলেও আসেন না ব্যস্ত চিকিৎসক (ডিএমএফ) রাসেল আমিন বাবু। রোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, তিনি নাকি ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত চররমিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে আসার সময় নেই। মাঝেমধ্যে আসেন কিন্তু তা রোগীদের সেবা দিতে নয়, আসেন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে জানান এলাকাবাসী। রামগতি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা চললেও মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে শঙ্কায়।
এই বিষয়ে রামগতি ৩১ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর নিকট জানতে চাইতে তিনি বলেন, চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারের পদটি শুন্য। চর রমিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা: নাহিদ রায়হান উপজেলা ৩১ শয্যা হাসপাতাল থেকে সাপ্তাহে একদিন করে সেখানে ডিউটি করেন।
রামগতি বাজারের এক ঔষধ বিক্রেতা ও পল্লী চিকিৎসক জানায়, পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার না থাকায় সাধারন মানুষ আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আসেন। গ্রামাঞ্চলে মেডিকেল অফিসাররা থাকতে চান না বলে দীর্ঘদিন ধরে আমরা অনেক সমস্যায় আছি। মেডিকেল অফিসারের অনুপস্থিতে রোগীরা আমাদের কাছে আসেন বলেই আমরা বাধ্য হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি।
রামগতি বাজার ঔষধ বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো: বাবুল উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নগুলোতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরো মেডিকেল অফিসারের ব্যবস্থা করলে আমরা সঠিক চিকিৎসা সেবা পাবো। গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে পল্লী চিকিৎসকগণ মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। অনেক সময় মেডিকেল অফিসারের অভাবে আমরা রোগীদের পরামর্শ দিতে বাধ্য হই, যদি ৩ থেকে ৪ জন মেডিকেল অফিসার অত্র এলাকায় থাকে তাহলে তা রোধ করা সম্ভব হবে। মেডিকেল অফিসারদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ি আমরা ঔষধ বিক্রয় করতে পারবো। এসময় তিনি আরো দাবী করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে অবহিতকরণ সভার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, ঔষধ বিক্রয়ে বিধি-নিষেধ সম্পর্কিত ধারনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে ড্রাগ লাইসেন্স বন্ধ থাকায়, অনেক যোগ্যবান দোকানদার ড্রাগ লাইসেন্স করার আগ্রহ থাকা সত্বেও তা করতে পারছে না সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা ইত্যাদি।
জনসংখ্যা হারে মেডিকেল অফিসার না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে ঔষধ দোকানির পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ কিনতে হচ্ছে রোগীদের। গ্রামাঞ্চলে মেডিকেল অফিসারের বিকল্প নেই; নচেৎ উপকূলের সাধারন মানুষগুলো সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করবে। চরগাজী ও চর রমিজ ইউনিয়নের খেটেখাওয়া মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা অতিদ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি হস্তক্ষেপ করবে।
0Share