সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর সোমবার , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবার সংসারের চাকা ঘুরে চার সন্তানের গান থেকে

লক্ষ্মীপুরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবার সংসারের চাকা ঘুরে চার সন্তানের গান থেকে

0
Share

লক্ষ্মীপুরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবার সংসারের চাকা ঘুরে চার সন্তানের গান থেকে

মহিউদ্দিন মুরাদ::মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর ১৯৭১ এর বিভীষিকাময় ২৫ মার্চ কালোরাত ঢাকাস্থ মতিঝিল আইডিয়েল স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র শাহ আলম বাবা মায়ের সাথে পালাতে গিয়ে পাক হানাদারের ছোড়া গোলা বারুদের ধোয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় তার চোখের আলো। দেশ স্বাধীন হলো।

এর মাঝেও ৮ম শ্রেণীতে ওঠার পর সামনের দিকে আর এগুতো পারেননি তিনি। চোখের আলো নিভিয়ে যাবার পর অপরের সহযোগিতা ব্যতীত তিনি চলাফেরা করতে পারছিলেন না। পিতা আব্দুল আজিজ পাক আমলে রেডিও’র শুরু থেকে ঢাকাস্থ চানকারপুল পরে শাহবাগ কেন্দ্রে চাকুরী করতেন। পিতা-মাতার সাথে শাহ আলম মতিঝিল এজিবি কলোনীতে থাকতেন। লেখা পড়া শুরু করেন, কলোনী সংলগ্ন “মতিঝিল আইডিয়েল স্কুল এন্ড কলেজে”। পিতার সাথে যেতেন “বাংলাদেশ বেতার” ঢাকা অফিসে। পিতা আজিজ ছিলেন, রেকর্ড স্যুটার। হাতের কাছেই ছিলো, বিভিন্ন শব্দ যন্ত্র। হাতের কাছে পেতেন কঙ্গো। পিতার অনুপ্রেরণায় তিনি কঙ্গো বাজানোর দিকে মনোনিবেশ করেন। চোখের আলো না থাকলেও আস্তে আস্তে শুরু করেন কঙ্গো বাজার কৌশল। তাকে হাতে খড়ি দেন, কঙ্গো বাদক কঙ্গো মো. কোরবান আলী। এরপর তবলা, বঙ্গো, নাল এ সবই তিনি রপ্ত করেন। তবে কঙ্গো বাজানোই ছিলো তার বেশী পছন্দ।

এর পর পিতা চলে যান না ফেরার দেশে। শাহ আলম চলে আসেন, লক্ষ্মীপুরের বাঞ্চানগরের ৬নং ওয়ার্ড গ্রামের বাড়ীতে। পিতার তেমন সম্পদও নেই। লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের বাঞ্চানগরের ৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত একমাত্র দু’শতক জমির ওপর টিনের দো-চালা ডেরা বাসা তাঁর। তাও একটু বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতর সবই একাকার হয়ে যায়। এর ভেতরেও লেখা পড়ার পাশি ছেলে মেয়েদের সঙ্গীন চর্চার ঘাটতি নেই। কঙ্গো বাজিয়ে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান থেকে তাঁর কিছু আয় হতো এক সময়। সেখান থেকে যৎ সামান্য আয় দিয়ে চেলে মেয়ের লেখা পড়াসহ সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাতেন। ডিজিটাল যন্ত্র বের হয়ে এখন আর তার কদর নেই সরকারী বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে। তবে এর মাঝেও যান্ত্রিক দলের কাউকে পাওয়া না গেলে তার ডাক পড়ে। তবে সেটাও খুবই কম। এর মাঝে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া। এরপরও তাদের সঙ্গীন চর্চার আগ্রহের কমতি নেই।

4singer

কোনো মতে চলতে থাকে তাঁর জীবন। এরপর সংসার পরিবার। চার সন্তানের চারজনই গানের শিল্পী। পাঁচ সন্তানের চারজনই গানের শিল্পী। লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজের বিএসএস পাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ্য কন্যা শারমিন চৌধুরী যুথি, কারিগরি স্কুলের ছাত্র এক মাত্র ছেলে সাজ্জাদ চৌধুরী বাবু, অপর তিন বোনের মধ্যে ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া শাহানা চৌধুরী মন ও হুমায়েরা চৌধুরী মীম, ২য় শ্রেণীর ছাত্রী নুসরাত জাহান কাকন। সকলেই গানের শিল্পী। লোক, পোপ, আধুনিক, দেশাত্মকসহ সব ধরণের গানেই তাদের দখল রয়েছে। এদের মধ্যে শারমিন জেলা পর্যায়ে তিনবার সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তিনবারই ১ম স্থান অধিকার করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়েও একাধিকবার। মীম সঙ্গীতের পাশাপাশি ব্যাডমিন্টনেও জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স হয়েছে ২০১৪ সালে। ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতাল মীম এবং বাবু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অজর্ন করে। একই দু’ভাইবোন ড্যানিশ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়। চার ভাইবোনসহ পাঁচজনের গান বাজনা করেই মূলতঃ এ পরিবারটির সংসারের চাকা ঘুরে।

এর মাঝে শারমিনের ৬টি অডিও ক্যাসেট ও সিডি বাজারে বের হয়েছে একটি কোম্পানীর মাধ্যমে। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে, হাফেজ বাবার দরবারে, আইসক্রীম ওয়ালা, অল্প পয়সার কেরানী, ভাইসাব। তবে এব থেকে সামান্য সম্মানী পেয়েছেন বলে আক্ষেপ করে শারমিন জানালেন। এরপর ২০০৬ সালে নোয়াখালী সাউন্ড টাচ নামে একটি কোম্পানী “প্রেমের জালা মরি” নামে ৭নং এ্যালবাম অনেকটা শেষ পর্যায়ের সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে মালিক পক্ষ আর সেটির কাজ শেষ করতে পারেননি।

এ ব্যাপারে ওই এ্যালবামের উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে সুযোগ পেলে তিনি এখনো সেটি বের করার ইচ্ছা তার রয়েছে।

এ ছাড়াও ২০০৫ সালে সারাদেশে পর পর কয়েকবার বোমা হামলার কারণে মানুষ ক্রমেই সাংস্কৃতিক কোনো আচার অনুষ্ঠান থেকে ছিটকে পড়তে থাকে। এর মাঝে ডিজিটাল যন্ত্রের কারণে কঙ্গোবাদক শাহ আলমের কদর ক্রমেই কমতে থাকে। তবে এখনও কালে ভদ্রে সন্তানদের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে যেতে হয় কালে ভদ্রে।

অপরদিকে মীম গেলো বছর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর একমাত্র বাছাইকৃত শিল্পী হিসেবে মীম বাছাই করে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীতে পাঠানো হয়। সেখানে তার লোক সঙ্গীতের রেকর্ড বের করা হয়। সর্বোপরি আর্থিক দন্যদশা এবং উপকরন সংকটের কারণে সঙ্গীতে সম্ভাবনাময় একটি পরিবার সামনে এগুতে পারছেনা। পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রয়োজনীয় উপকরন পেলে সম্ভাবনাময় সঙ্গিতের এ পরিবারটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এ প্রত্যাশা এলাকার সকলের।

সাহিত্য | সংস্কৃতি আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুরে সমমনা ঐক্য পরিষদের শিক্ষামূল প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ

চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় পাঠাগার সম্মেলন

ঐতিহ্যবাহী চৌরাস্তা ক্লাবে’র আংশিক কমিটি গঠন

লক্ষ্মীপুর আইসিবিসি প্রকল্পের শিশু যত্নকারীদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

লক্ষ্মীপুরস্থ কমলনগর সোসাইটির ইফতার অনুষ্ঠান

ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ইলেকট্রিক ইলেকট্রনিক্স এন্ড মেশিনারীজ ব্যবসায়ী সোসাইটির বনভোজন

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com