সানা উল্লাহ সানু:: একটি মসজিদের জন্য কাদঁছে পুরো কমলনগরের সাধারণ জনতা। মসজিদের মুসল্লী ও দর্শনার্থী সবারই চোখে পানি। আর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মেঘনায় সম্পূর্ন বিলীন হয়ে যাবে এ ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৯ অক্টোবর রাতে বিলীন হয়ে গেছে মসজিদের দ্বিতল অংশটি। তাই শেষবার মসজিদটি দেখতে মেঘনাপাড়ে ছুটে যাচ্ছেন হাজার হাজার নারী পুরুষ। বুধবার (১৯অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে কমলনগরের সাহেবেরহাট ইউনিয়নের জগবন্ধু গ্রামস্থ কাদিরপন্ডিতেরহাট গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। শত বছরের এ মসজিদে এদিনই সর্বপ্রথম মাগরিব পড়তে দ্বিধায় পড়েছে মুসল্লিরা কারণ যে কোন সময়ই ভেঙ্গে পড়তে পারে মসজিদটি।
এলাকার স্থানীয়রা এতটাই আবেগে আপ্লুত যে মসজিদের দরজা, জানালা, গ্রিল কিছুই খুলেননি। তাদের বিশ্বাস ছিলো সৃষ্টি কর্তা যখন নিয়ে যাচ্ছে সবই নিয়ে যাক।
শোকে নির্বাক হয়ে দিকহীন ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে মসজিদে ৪০ বছর থেকে ইমাম করা ইমাম হাফেজ ফয়েজ আহম্মদ কে। দেখতে এসে আবেগে চোখেরপানি এসেছে হাজিরহাট হামেদিয়া সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার অধ্যক্ষ যায়েদ হোসেন ফারুকীর। মসজিদটি শেষ বার দেখে গিয়ে পরে নিজের ফেসবুক একাউন্টে জানিয়েছেন অনুভুতি।
স্থানীয়রা জানায়, মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে গত ৫ মাস আগেই বিলীন হয়ে গেছে কমলনগরের ঐতিহ্যবাহী কাদিরপন্ডিতের হাট বাজার। কিন্তু এখানে অবস্থিত দারুচ্ছালাম জামে মসজিদ ও পাশের মাদরাসাটি টিকে যায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস ছিল এ স্থাপনাগুলো হয়তো ভাঙ্গবে না। কিন্তু মাত্র ২ দিন থেকেই হঠাৎ করে মসজিদ ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। এতে ধর্মীয় অনুভুতির কারণে মসজিদ ভাঙনের কবলে পড়লে স্থানীয় মুসলিরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মসজিদ বিলীন হওয়ায় এলাকার লোকজনকে কান্না আর আহাজারি করতে দেখা গেছে।
এলাকার বাসিন্দা ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ রামগতি দর্পনের লেখক ম. নুরুল আলম স্থানীয় সূত্র উল্লেখ করে জানান, বিংশ শতাব্দির ৩০-এর দশকে মরহুম হাজী মুসলিম নিজ বাড়ির দরজায় এ মসজিদ স্থাপন করেন। পরে স্থানীয় মরহুম ওমর আলী ফরাজী এ মসজিদের জন্য ৬৫ শতক জমি দান করেন। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্নিঝড়ে মসজিদটি ব্যাপক ক্ষতি হলে এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট থেকে বেশি দূরত্বের কারণে বাজার কমিটির অনুরোধে মসজিদটি বর্তমান স্থানে স্থাপন করা হয়। ১৯৭০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মসজিদটির দেখাশুনা করেছেন স্থানীয় ব্যবসাী হাজী আমির হোসেন। পরবর্তীতে মাস্টার নুরুল আলমসহ স্থানীরা এ মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। এ মসজিদটিই এক সময়ে বৃহত্তর রামগতির প্রথম দ্বিতল মসজিদ হিসাবে পরিচিতি পায়। বিগত ৪০ বছর থেকে ইমামতি করছিলেন হাফেজ ফয়েজ আহম্মদ।
মু.নুরুল আলম বলেন ‘এলাকার লোকজনের তিলে তিলে গড়া ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ নির্বাক হয়ে গেছে।”
প্রসঙ্গত: মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে গত ৫ বছরে কমলনগর উপজেলার মোট ৩০৮ টি জামে মসজিদের মধ্যে প্রায় ১শ মসজিদ বিলীন হয়েছে।
0Share