সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে অপচিকিৎসা

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে অপচিকিৎসা

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে অপচিকিৎসা

আতোয়ার রহমান মনির: লক্ষ্মীপুরে ভূয়া চিকিৎসকের ছড়াছড়িতে বাড়ছে অপচিকিৎসা। জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে ২৮৬টি পদ শূন্য থাকায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল,সদর উপজেলার উত্তর দক্ষিণসহ চারদিকে ডাক্তারি বিদ্যা ছাড়াই সেজে বসেছেন ডাক্তার। কেউ কেউ নিজেকে সবজান্তা পরিচয় দিয়ে

সামান্য পেটব্যাথা,জ্বর,সর্দি-কাশি,বিয়ের বর বাঁধা কাটানো,জ্বিন তাড়ানো, ঝাড় ফুঁকসহ এসব কাজই করে নিজেকে দাবী করছেন বড় হেকিম।

mistreatment-1স্থানীয়রা জানান, জেলা জুড়ে বড় হেকিম ও ভূয়া চিকিৎসকের সংখ্যা হাজার হয়েও সদর উপজেলাসহ পৌর শহরে রয়েছে শতাধিক । দালালসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিথিদের ম্যানেজ করে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। পৌর শহরের ১৫ নং ওয়ার্ডে পশ্চিম লক্ষ্মীপুরে বড় হেকিম সেজে চিকিৎসা করছেন মৃত অরুন চন্দ্রের পুত্র ক্যাশব বাবু। সদর উপজেলার উত্তরের আদিল পুর গ্রামে বড় ওজা সেজে চিকিৎসা সেজে কাজ করছেন মহিব উল্যাহ্ মাওলানা। পূর্বে মিয়া রাস্তায় আবির নগরে আফছার উদ্দিন ভুঁইয়া বাড়ীতে পেটব্যাথা,জ্বর,সর্দি-কাশি, বিয়ের বর বাধা কাটানো,জ্বিন তাড়ানোসহ ঝাড় ফুঁকের চিকিৎসার কাজ করছেন মিজানের স্ত্রী রোশন আক্তার। এছাড়া দক্ষিনে তেহরীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামে শাহে আলমের স্ত্রী তৈয়বা খাতুন (৫৫) ডাক্তারি বিদ্যা ছাড়াই সেজে বসেছেন ডাক্তার। তিনি পেটব্যাথা ,জ্বর,সর্দি-কাশি,বিয়ের বর বাধা কাটানো,ঝাড় ফুঁক এসব কাজই করে চলেছেন গত ২০ বছর ধরে। ভবানীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণে ছলেমা বেগম ঝাড় ফুকসহ চিকিৎসক সেজে কাজ করছেন ১৫ বছর ধরে। একই ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ ওহাবদা অফিসের পার্শ্বে খেজুর তলীতে আব্দুল খালেক সেজে বসেছেন চিকিৎসক। গত ২৫ বছর ধরে খালেক এলাকায় চিকিৎসার নামে প্রতারনা করে রমরমা ব্যবসা মেতে উঠেছেন । আর এসব ভূয়া চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে অপচিকিৎসার চিকিৎসায় প্রতারিত অনেকে। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের মাসকাবারি অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসার নামে এ প্রতারনা করে ভূয়া চিকিৎসকরা হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।


কথা সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের ইউনিয়নের ৬০ বছরের বৃদ্ধা পারভীন আক্তারের সাথে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগের তার মেয়ের স্বামী পায়ের একটি রোগের কারনে এন্টিবায়েটিক অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি খাওয়ায় মাথা গুড়ানোসহ ও আবল তাবল বলতেন । সে কারনে তিনি তার মেয়ের স্বামী রহমানকে নিয়ে আসেন তার বাড়ীর পার্শ্বে আবীর নগর গ্রামের রোশনের নিকট। রোশন ঘরে মোমবাতিসহ আগর বাতি জ্বালিয়ে বলেন জ্বিনের আসর। তাড়াতে হবে । তাড়াতে একটি দামী মোবাইল সেট অথবা দামবাবত ২০ হাজার টাকা দিতে হবে তাকে।

রোশনের এমন কথায় ছলে পরে বলে পরে পারভীন ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। তার পর চিকিৎসায় কোন উপকার পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে রোশনের পালিত দালালদের চওরায় সে টাকা ফেরত পাওয়া হয়নি পারভীনের।

অভিযোগ জানতে কথা হয় ভূয়া চিকিৎসক রোশনের সাথে। রৌশন জানান, তার চিকিৎসায় দালাল কি বুঝেন না। তবে তাঁর পরিচিতরা রোগী নিয়ে আসেন, তাদের যাাতায়েত ভাড়া বাবত তিনি রোগী প্রতি এক হাজার থেকে ২ হাজার টাকা প্রদান করেন। আর তিনি কি চিকিৎসা করেন জানতে বলেন, বিয়ের বর কাটা,জ্বিন তাড়ানোসহ সবকাজই করেন তিনি পুরুষদের সাথে দেখা না দিয়ে। তার চিকিৎসায় কলেজ পড়–য়া অনেক মেয়ের বিয়ে হয়েছে দাবী করেন ভূয়া হ্যাকিম রোশন।

এছাড়া কথা হয় সদর উপজেলার পেয়ারাপুর এলাকার ওহিদুল হকের স্ত্রী লাকী বেগমসহ ওই এলাকার জোৎসা বেগম সহ নারগীসের সাথে। তারা জানান, ভবানীগঞ্জে খেজুর তলীতে আব্দুল খালেকের অপচিকিৎসার কথা। খালেক এলাকায় বর কাটা,বানটোনার কাজ,ক্যান্সার ,লিভার ,জন্ডিস,সরকারি চাকুরি পাওয়ার তকদির দেয়ার কাজ করেন চুক্তি ভিত্তিক। তার খপ্পরে নারগীস ও জোৎসা বেগমের প্রায় ত্রিশ হাজার বেশি দিয়েছেন খালেককে । কিন্তু তারা চিকিৎসা ও তকদির না পেয়ে ওই টাকা ফেরত চেয়ে ৯ বছরেও ফেরত পাননি তারা।

এছাড়া পৌর শহরের ১৫ নং ওয়ার্ডে পশ্চিম লক্ষ্মীপুরে মৃত অরুন চন্দ্রের পুত্র ক্যাশব বাবুর সাথে । তিনি নিজেকে বড় হেকিম চিকিৎসক দাবী করেন। দেখা যায় তার চার পাশ ঘিরে রয়েছেন রায়পুরের কেরোয়া গ্রাম ও বামনী ইউনিয়ন থেকে আসা রোগী। তার সামনে কথা হয় রোগীদের সাথে। রোগী শাহাআলম জানান,তিনি তার বাড়ীর পাশ্র্¦ে এক মহিলার পরামর্শে এসেছেন। রোগ তার পেট ব্যাথা। এ প্রথমই তিনি এসেছেন। হেকিম তাঁকে জানান, তার কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। ডাব পড়াসহ করাত কাটা পানিতে সেরে যাবে চিকিৎসা। এমন বিশ্বাসে তিনি পাচঁ হাজার টাকা প্রদান করেন ক্যাশব বাবুকে। টিনের মরিচা ধরা করাত বিজিয়ে পানি ও তাবিজ যে মানুষের ক্ষতি হয় জানেন না তিনি ? তার পর তার চিকিৎসায় রোগ ভাল হয় জোর গলায় বলে ক্যাশব বাবু জানান, তিনি এ চিকিৎসা করছেন গত ত্রিশ বছর ধরে । তার চিকিৎসায় কেউ ক্ষতি হয় নাই ।

ক্যাশব বাবুর অপচিকিৎসার অভিযোগ করেন রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী গ্রামের হাসানের স্ত্রী খুকী বেগম। তিনি জানান,তার শশুর বাড়ীর পার্শ্বের এক মহিলার পরামর্শে তাঁর বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে ক্যাসম বাবুর নিকট এসেছিলেন। সমস্যা তার বিয়ের পর তার মেয়েটির বাচ্চা হয় না। সমস্যা কি সে কথা ক্যাশব বাবুকে কিছু বলেন নাই খুকী । মেয়ের নাম জানার পর ক্যাশব বাবু জানান তাকে বর বেধেছে দুষ্টরা। এ জন্য বিয়ে হচ্ছে না। তার কাছথেকে চিকিৎসা নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে হবে মেয়েটি। ক্যাশব বাবুর এমন কথা শুনে বিবাহিত মেয়ে হেসে উঠতেই ক্যাশব বিষয়টি বুঝতে পারেন। ততক্ষনে চিকিৎসার কথা না বলে কে পাঠিয়েছে তা জানতে চান ক্যাশব বাবু । পরে খুকী বলতেই ক্যাশব বাবু টেলিফোন নিয়ে চলে যান আড়ালে। বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ বসে সব কথা বলতে থাকেন মুখস্তভাবে। এমন চিকিৎসায় তাকে জুটো পেটা করার উদ্দেশ্যে জুতা হাতে তুলতেই তার পালিত কয়েকজন সন্ত্রাসী এগিয়ে এসে বাহির হয়ে চলে যেতে বলেন খুকীকে। নচেৎ তিনি লাঞ্চিত হবেন সে ভয় দেখান সন্ত্রাসীরা।

ক্ষহিগ্রস্থ আরো কয়েকজন অভিযোগ করে জানান,ক্যাশব বাবুর ঝাড় ফু ও তাবিজসহ অপচিকিৎসা বন্ধে বিচার ও দাবী তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্থসহ স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,সম্প্রতি অপচিকিৎসায় এক শিশু অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে ভ্রাম্যমান আদালত ভূয়া চিকিৎসক তৈয়বা খাতুনকে সরকারি কোষাগারে ২ লাখ টাকাসহ শিশুর চিকিৎসা বাবদ আরো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ডাক্তারি বিদ্যা ছাড়াই সেজে বসেছেন ডাক্তার তৈয়বার এমন অভিযোগ ভ্রাম্যমান আদালতে দোষ স্বীকার করে বাড়ীতে আর চিকিৎসা করবেন না আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, তিনি সম্প্রতি সদর হাসপাতালের ওটি বিভাগের ব্রাদার বিকাশ চন্দ্র ভৌমিককে ভূয়া চিকিৎসার অভিযোগে ২ লাখ টাকা অর্থদন্ড করে রায়প্রদান সহ এ পর্যন্ত ২ জনকে ভূয়া চিকিৎসার অভিযোগে অর্থদন্ড করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া ভূয়া চিকিৎসায় কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তদন্ত করে বিচার করা হবে বলে জানান তিনি।

সদর হাসপাতালের ই.এম,ও ডাঃ কমলাশীষ রায় জানান, কিছু অসুখ আছে তা সামান্য চিকিৎসায় ভাল হয়ে যায়। এ অসুখে অনেক রুগিরা চিকিৎসকের কাছে না এসে কেন যে ঝাঁড়ফুকের কাছে যাচ্ছেন তা ঠিক না।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ জানান, চিকিৎসক নামধারী ডাক্তারি বিদ্যা ছাড়াই হাতুরেরা চিকিৎসা করছে সেটা অবৈধ। কয়েক দিনের মধ্যে কোয়াক চিকিৎসকসহ হেকিম,কবিরাজ ও ওজাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য যথাযথ কর্তপক্ষকে জানানো হবে। এছাড়া জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে ২৮৬টি পদ শূন্য পদে লোক নিয়োগের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন আছে । তিনি রুগীদের পরামর্শ প্রদান করেন আরো জানান, প্রতিটি এলাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক,ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ,এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্র সহ জেলা শহরের সদর হাসপাতাল। এসব স্থানে রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাবে বিনা মূল্যে। সে সাথে পাবেন বিনা মূল্যে ওষুধও। তাতে করে জেলায় পর্যায় ক্রমে বন্ধ হবে অপচিকিৎসা।

স্বাস্থ্য আরও সংবাদ

রামগতিতে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সম্পর্কিত সভা

রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন দুই সংযোজন

রামগতিতে ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের উদ্বোধন

রায়পুরের সেই ডাক্তারের লাখ টাকা জরিমানা, চেম্বার সিলগালা

রামগতিতে পোলট্রি খামারের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ

উপকূলেও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু, জনবল সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com