আতোয়ার রহমান মনির:: রায়পুরে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বসে লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে ১০ বছরের শিশু রাসেল। পিতা-মাতা লেখাপড়ার জন্য পাঠালেও সহপাঠীদের নিকট আমড়া বিক্রি করে পার করছে লেখাপড়ার সময়। দৃশ্যটি চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বসা ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল। রাসেল জানান, তার সামনে থাকা ঐ বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র সে। তার রোল নং ১২৮, লেখাপড়া ভাল লাগে না তার, তাই বাজার থেকে কম মূল্যে আমড়া ক্রয় করে তার সহপাঠীদের নিকট পাঁচ টাকা ধরে প্রতিটি আমড়া বিক্রি করছে। এতে তার বেশ লাভ হয় ও লেখাপড়ার সময় চলে যায় তার। তার বাড়ি উত্তর চর বংশী ইউনিয়নের চর ইন্দুরিয়া গ্রামে। সে মজিবুল হক বেপারীর ছেলে দাবি করে আরও জানান, এ পর্যন্ত স্কুলের কোন টাকা পায় নাই, তাই রাসেল স্কুল সময়ে আমড়া বিক্রি করছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রাসেলের মা সাবেরা বেগমের সাথে। তিনি জানান, রাসেল এর চার ভাই ও তিন বোন সহ নয় জনের সংসার তাদের। তারপরও কষ্ট সন্তানদের বুঝতে না দিয়ে কষ্টে থেকেও রাসেলকে সুশিক্ষিত করার স্বপ্ন তাঁর। তাই তিনি প্রতিদিন ছেলেকে হাতে বই খাতা ও হাতে কিছু টাকা দিয়ে স্কুলে পাঠান। রাসেল লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্কুল সময়ে আমড়া বিক্রি করেন তা তিনি জানতেন না। এমনকি স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষকরাও তাকে জানাননি। তিনি ছেলের অকালের লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া দেখতে চাননা। কথাগুলো বলতে ফুপিয়ে কাঁদছেন সাবেরা (৪৫)।
এ ব্যাপারে কথা হয় চর বংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সবুজের সাথে। তার বিদ্যালয়ের সামনে আমড়া বিক্রি করছে তার বিদ্যালয়ের ছাত্র তা তিনি দেখেননি। অনেক বিদ্যালয়ের সামনে ছোট ছোট শিশুরা আমড়া বিক্রি করছে। বিষয়টি কেউ নজরে আনেনি। তাই তিনিও গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী তিনি চিনেন, রাসেলকেও তিনি চিনতেন। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুজিবুর রহমান জানান, ২নং চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিভাবক উপবৃত্তি আত্মসাতের অভিযোগ করছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট। আবেদনকারী সখিনা বেগম হলেও একাধিক অভিভাবকের নাম সখিনা বেগম থাকায় আবেদনকারীকে সনাক্ত করা যায়নি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপবৃত্তির অনিয়ম তদন্ত করায় তিনি অনিয়মের ব্যাপারে এর বেশি কিছু বলতে পারছেন না। তবে কোন বিদ্যালয়ের সামনে দোকান পাঠ, শিশু বিক্রেতা যাতে না থাকে সেজন্য তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঐ বিদ্যালয়ে কমিটিতে থাকা এক সদস্য জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় যোগসাজসে ভূয়া শিক্ষার্থী ও উপস্থিত দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করছেন। সম্প্রতি শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা উপবৃত্তির টাকা না পেয়ে বিদ্যালয়ের সামনে হট্টগোল করেন এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনিয়ম উল্লেখ করে তদন্তের আবেদন করেন। তার মতে এসব অনিয়মের বিচার শিক্ষকদের হওয়া দরকার। কিন্তু তার উল্টোটা ঘটেছে এ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ পরিবর্তন হয়েছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার ফাতেমা ফেরদৌসি জানান, বিদ্যালয়ের সামনেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার এ সব শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করতে উপবৃত্তি প্রথা চালু করছেন। রায়পুর উপজেলায় গত অর্থ বছরে ১১১টি বিদ্যালয়ে ২২ হাজার ৯১ জন ছাত্র ছাত্রীর মাঝে ১ কোটি ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮ শত ৫০ টাকা প্রদান করেছেন।অথচ বিদ্যালয়ের সামনেই শিক্ষার্থীরা দোকান পেতে ঝরে যাবে তা আশা করি না। এ বিষয়ে উপজেলা সভায় আলোচনা করা হবে। ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য শিক্ষক দিয়ে জোরালো ভাবে নজর দেওয়া হবে।
0Share