দৈনিক প্রথম আলো:: গত ১৫ অক্টোবর। সময় রাত ৩টা ১০। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রয়েল কোচ নামে একটি বাস সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডের কাছে এসে থামে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ ওই বাস থেকে নেমে দাঁড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে সাত-আটজন তাঁকে ঘিরে ধরে এবং খুব দ্রুত মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। মাইক্রোবাসের পেছনে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানও যেতে দেখা গেল। অপহৃত ওই চিকিৎসকের কোনো খোঁজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মুহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ ২৮তম বিসিএস পাস করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বদলি হন। গত ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অবেদনবিদ্যায় (অ্যানেসথেশিয়া) দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকায় আসেন। অপহৃত চিকিৎসকের স্ত্রীও পেশায় চিকিৎসক। ছেলেমেয়ে নিয়ে লক্ষ্মীপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে ইকবাল মাহমুদ ওই রাতে ঢাকায় ফিরছিলেন।
অপহৃত চিকিৎসকের বাবা এ কে এম নুরুল আলম গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ওই দিনই ধানমন্ডি থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেছে। পরদিন রাত ১২টার পর পুলিশ মামলা নেয়। মামলার এজাহারে তিনি সিসিটিভির ফুটেজে যা দেখেছেন তার বিবরণ দেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দোকানদার ও রিকশাচালক ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ওই ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি। এ কে এম নুরুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অপহরণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তারা কেউই মুখোশ পরে ছিল না। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমার ছেলেকে তো উদ্ধার করতে পারেইনি, তাদের হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরও অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, পুলিশের গাড়ি ও অপহরণকারীদের কাউকেই শনাক্ত করতে পারেনি।
তারা নীরব ও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।’ তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজে পুলিশের গাড়ি থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর পুলিশ আরও গুটিয়ে গেছে। এই অপহরণের জন্য কাউকে সন্দেহ করেন কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে নুরুল আলম বলেন, তাঁর ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁর কোনো শত্রুও নেই। তাবলিগ করতেন, তবে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততার অভিযোগ নেই। নুরুল আলম বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সরকারি চাকুরে। তাঁর সন্তান বিপথগামী নন। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, অপহৃত চিকিৎসককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
ঘটনাস্থলে পুলিশের গাড়ি কেন, ওই গাড়িতে কারা ছিলেন, ঘটনার ৩৩ দিন পরও সে সম্পর্কে তাঁরা কোনো তথ্য পাননি। যে মাইক্রোবাসে চিকিৎসককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তার পেছনের গাড়িটি পুলিশের ছিল কি না—এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘দেখাই তো যাচ্ছে। তবে গাড়িটি কোন থানার, ওই গাড়িতে কে কে ছিলেন, সে সম্পর্কে জানা যায়নি।’ ধানমন্ডি থানার ওসি আরও বলেন, অপহৃত চিকিৎসকের বাবা ছেলেকে খুঁজে পেতে চারটি ‘বিকাশ’ নম্বরে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা কাদের হাতে গেছে, সেটাও তাঁরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) ছায়া তদন্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো অগ্রগতির খবর এখন পর্যন্ত নেই। ইকবাল মাহমুদের পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, ইকবাল তাবলিগ করতেন। এর বাইরে আর কোনো কিছুর প্রতি ঝোঁক ছিল কি না, তা কেউ জানাতে পারেননি। লক্ষ্মীপুরে তাঁর স্ত্রীর একটি বেসরকারি ক্লিনিক আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিচালক (প্রশাসন) ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ লিখিতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে ইকবাল মাহমুদের নিখোঁজ থাকার খবর জানিয়েছেন।
সৌজন্য: প্রথম আলো
0Share