লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ডেস্ক: বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩টি ফেরিরুটসহ দেশের নদী পথের বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৩ হাজার ২শ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় সারা বছর ফেরি চলাচল নিশ্চিত করতে ভোলা-লক্ষ্মীপুরের পরিবর্তে ভোলা-মতিরহাট ফেরিরুট স্থাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।দেশের নৌ পরিবহন সেক্টরের বড় মাপের এ প্রকল্পটি অতি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ‘একনেক’-এর সভায় অনুমোদিত হয়েছে।৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকার ঐ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে।
এ প্রকল্পের আওতায় ১৪টি ল্যান্ডিং ল্যান্ডিং স্টেশনে যাত্রী ও ফেরি ব্যবহারকারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছন প্রকল্প সংশ্লিষ্টগণ। তবে এসব ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণের আগে সন্নিহিত নদ-নদীর গতিপথসহ সড়ক অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধাসমূহ পরিপূর্ণ বিবেচনা ও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে স্থান নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছন ওয়াকিবহাল মহল।
ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে বর্তমানে ইলিশা ও মজুচৌধুরীর হাটে ফেরিঘাট এবং লঞ্চঘাট থাকলেও মেঘনার অব্যাহত ভাঙন ও চড়া পরার কারণে বর্ষা ও শুষ্ক মৌশুমে এসব ঘাট সারা বছর সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তু অসংখ্য ডুবো চরার কারণেই ১৮ কিলোমিটার প্রশস্ত ভাটি মেঘনা পাড়ি দিয়ে একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে ২৮ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। নদী ভাঙনে গত কয়েক বছর ধরে ভোলার ইলিশার ফেরি ঘাটটি বর্ষা মৌশুমে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে। আবার লক্ষ্মীপুর প্রান্তের মজুচৌধুরীর হাট ফেরি ঘাটটি শুষ্ক মৌশুমে ভাটার সময় বন্ধ হয়ে হচ্ছে রহমতখালী চ্যনেলের মুখে নাব্য সংকটে।
এসবের প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে মজুচৌধুরীর হাট ঘাটটি প্রায় ৫ কিলোমিটার ভাটিতে মতিরহাট এলাকায় মূল মেঘনাপাড়ে সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। গতবছর নৌ পরিবহন মন্ত্রীও বিষয়টি উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থমকে যায়। মতিরহাটে ঘাট স্থানান্তর করলে, নৌপথের দূরত্ব হ্রাসসহ মেঘনার নাব্য সংকট এড়িয়ে ফেরি সার্ভিস কিছুটা নির্বিঘœ হবে। তবে লক্ষ্মীপুর থেকে সড়ক পথে প্রস্তাবিত ফেরি ঘাটের দূরত্ব বাড়বে। উপরন্তু লক্ষ্মীপুর সদর থেকে মতিরহাট পর্যন্ত রাস্তাটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। ফলে তা আঞ্চলিক বা জেলা সড়কের স্তরে নির্মিত না হওয়ায় পুরো সড়কটি পুনঃনির্মাণ করতে অর্থ ও দীর্ঘ সময় ব্যয় হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সব কিছু সরেজমিনে খতিয়ে দেখেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মাঠ পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শক ও পর্যবেক্ষক দলও প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখে তা অনুমোদনের পরেই কেবল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে’ বলেও জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টগণ।
এ ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট ঐ প্রকল্পের পরিচালক জানিয়েছন, ‘বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে। চলতি অর্থ বছরের চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী থেকে কিছু থোক বরাদ্দ রেখে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চলছে। আগামী ২০১৯ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শুরু ও শেষ করতে। ড্রেজিংসহ প্রতিটি অবকাঠামা নির্মাণ ও উন্নয়নে সর্বোচ্চমান নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এ লক্ষে বিশ্বব্যাংকও পরামর্শক নিয়োগ করবে। খুব শিঘ্রই প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তার লক্ষে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে বহিঃসম্পদ বিভাগের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সূত্র: দৈনিকি ইনকিলাব
0Share