আতোয়ার রহমান মনির: রায়পুরের চরাঞ্চলে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে লেখা-পড়া করছে ৩ শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী। শীতকালে স্কুলে গেলেও বর্ষায় রাখতে হয় তাদের বন্ধ।এমন প্রকৃতি নির্ভর করে বেড়ে উঠছে রায়পুরের চরাঞ্চলের চর জালিয়া,চরগাসিয়া ও চর ইন্দুরিয়ার এলাকার শিশু
শিক্ষার্থীরা। এতে করে থমকে আছে চরাঞ্চলের বসবাসরত ২০ মানুষের ভাগ্য। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, চরাঞ্চলে যেতে মেঘনা বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর উপর একটি ব্রীজ স্থাপন করা হলেই ১২ মাসেই বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখা-পড়া করতে পারবে এখানকার শিক্ষার্থীরা।
জানাগেছে,জেলার রায়পুর উপজেলার পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ১ শত ৬০ জন লোকসংখ্যা রয়েছে। এদিকে ৩টি ইউনিয়নের উত্তর চরআবাবিলের চরজালিয়া,উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশীর চরগাসিয়া, চরইন্দুরিয়া ও চরকাচিয়া এলাকায় বসবাস করছেন বেশির ভাগ মানুষ। এসব এলাকার একটি অংশের মানুষ মেঘনা নদীর ওপারে কৃষি জমি আবাদ,নদীতে মাছধরা, কায়িক শ্রম উপার্জনে জীবিকা নির্বাহে বসবাস করছেন ২০ হাজার মানুষ।তারা ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাস প্রকৃতি নির্ভর মোকাবেলা করলেও তারা বর্ষা শীত অতিক্রম করে চলে তাদের জীবন। হাটবাজার কিংবা চলার উপযোগীর জন্য দিনে এক বারের জন্য কষ্টে মেঘনা নদী পার হয়ে আসতে হয় তাদের ।
অপরদিকে তাদের সংসারে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে লেখা-পড়া করছেন চরাঞ্চলের ৩ শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী।
স্থানীয় মেঘনা পাড়ের মাছঘাটের আড়তদার জয়নাল আবেদীন দেওয়ান জানান, চরাঞ্চলে শিশুরা বর্ষার ৬মাস লেখাপড়া বন্ধ রাখে,শীতকালে চলে তাদের লেখাপড়া। মূলত একটি ব্রীজ না থাকায় এ সমস্যা তাদের। মেঘনা বাজার এলাকার মেঘনা নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে ১২ মাসেই পাঠদানেযেতে পারবে এখানকার শিক্ষার্থীরা।এ জন্য সমস্যা নিরসনে বৃত্তবানরা এগিয়ে এসে সম্মিলিত চেষ্টায় ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
জালিয়ার চর এলাকায় বসবাসরত ১নং চরবংশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসমা আক্তার জানান,বর্ষাকালে নদীতে নেীকা ও পারা পারের কেউ না থাকলে সেদিন আর বিদ্যালয়ে আসতে পারেনা সে।
চরে বসবাসরত ১নং চরবংশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহি হোসেন জানান, শীতকালে চলে তার লেখা-পড়া। শীতে সব শুকিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসতে তার অসুবিধা হয় না। আর বর্ষায় নদীতে বেশি পানি থাকায় তখন তার বিদ্যালয়ে আসা সম্ভব হয় না।
শিক্ষার্থী তন্নী আক্তার জানায়, এখন শীতকাল নদীতে পানি না থাকায় ১নং চরবংশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসেছে সে। এ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। তন্নী আরো জানায়,
বর্ষায় সে আসার চেষ্টা করলেও তার বড় ভাই অনেক সময় নৌকা পার করে দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা হয় তার । তার পরও বিদ্যালয় থেকে বাড়ী ফিরতে অপেক্ষায় থাকতে হয় নৌকার।
নদীতে পানি না থাকায় বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করতে এসেছে নদীর ওপার বসবাসরত চর ইন্দুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাবিহা আক্তার।কথা হলে জানায়,বর্ষাকালে নদীতে পানি ও রাস্তা-ঘাট কাদা থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে পারে না সে।
একই বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র আক্তার হোসেন জানায়, তার পিতা দেলোয়ার হোসেন একজন কৃষক। বর্ষাকালে রক্ষণাবেক্ষণে ক্ষেতের দিকে নজর থাকায় তার আর বিদ্যালয়মুখী হয়ে ওঠেনা। মেঘনা বাজার নদীর ওপর যদি একটি ব্রীজ থাকতো তাহলে বর্ষাকালে নিজের ইচ্ছায় বিদ্যালয়ে আসতে পারতো সে।
চর ইন্দুরিয়া গ্রামের আলম মাঝি জানান, চর এলাকায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। কৃষি নির্ভর হওয়ায় তাদের থাকতে হয় এ চরে। এখানকার সন্তানরা নদী পার হয়ে চর ইন্দুরিয়া,চরবংশী ও ব্র্যাক স্কুলগুলোতে লেখাপড়া করতে যায়। এ নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা ৬ মাস স্কুলে যায়, আর ৬ মাস স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকে। এ জন্য গত কয়েক দিন আগে নদীর উপর সকলের উদ্যোগে একটি সাকোঁ স্থাপন করা হলেও সে সাঁকোটি উঁচু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সাঁকোতে উঠতে না পেরে অল্প পানি থাকায় নদী সাঁতরিয়ে স্কুলে যায়।
চরের কৃষক ইমাম হোসেন জানান,সাঁকোটি অনেক উঁচু।এখানকার ছোট ছোট শিশুরা (পোলাপাইনরা) এ সাঁকো দিয়ে উঠে পার হতে অনেকেই সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে। এ জন্য এ সাকোঁদিয়ে এখন আর কেউ যাতায়াত করে না। এখানে একটা ব্রীজের দরকার।
১নং চরবংশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, জালিয়ার চরসহ চরের শিশুরা বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। শীতকালে সেসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও তখন জানান, বর্ষার না আসতে পারার কথা। এজন্য মেঘনা বাজারের উপর দিয়ে একটি ব্রীজ স্থাপনের দাবী জানান তিনি।
একই দাবী উল্লেখ করেন পাশ্ববর্তী চরইন্দুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহম্মেদ ও উত্তর চরইন্দুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতি বেগম । তাদের বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী চরাঞ্চল থেকে আসে। শীতকালে তাদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও বর্ষায় তাদের দেখা যায় না। এ বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
রায়পুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার ফাতেমা ফেরদৌসি জানান, প্রকৃতির উপর নির্ভর করে লেখা-পড়া বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মূখি করার জন্য জোরালো সমস্যা নিরসনে জোরালো মোকাবেলা নজর দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, শুষ্ক মেীসুমের সমস্যার চেয়ে বর্ষা মেীসুমে সমস্যাটা প্রকোট আকারে ধারণ করেছে। এ সময়ে বাচ্চাগুলো যাতে যথাসময়ে স্কুলে আসতে পারে তার জন্য যে উদ্যোগ নেয়া দরকার। সমস্যা নিরসনে তিনি বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়টি সম্মিলিত চেষ্টায় উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন।
0Share