আতোয়ার রহমান মনির: মেঘনায় ডুবোচরে জোয়ার-ভাটায় নির্ভর করে সাবধানে চলে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটের ফেরি ও লঞ্চ। গত কয়েক দিন ধরে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরঘাট এবং ভোলা জেলার ইলিশা ঘাটের প্রবেশমুখে পলি জমায় নদীতে নাব্য সংকট ও ডুবোচর দেখা দিয়েছে। ডুবোচরে আটকা পড়ে নৌরুটে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা পড়ে চরম দুর্ভোগে। এতে করে প্রতিদিন চলাচলে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মজুচৌধুরীহাট লঞ্চঘাটের এক কিলোমিটার দূরে রহমতখালী চ্যানেলে থাকতে হয় ফেরি ও লঞ্চযাত্রীদের। ইতিমধ্যে মেঘনা নদীতে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে। বিশেষ করে মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটের এক কিলোমিটার দূরে রহমতখালী চ্যানেলে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ডুবোচরের ড্রেজিং না করলে যে কোনো সময় ফেরি চলাচল বন্ধ হতে পারে। দ্রুত ড্রেজিং করার দাবি জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াতের জন্য ২০০৬ সালের এপ্রিলে কামেনী, কিশানী ও কস্তুরী নামের তিনটি ফেরি নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটটি চালু করে সরকার। বর্তমানে মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটের এক কিলোমিটার দূরে রহমতখালী চ্যানেল হয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা এ নৌরুট দিয়ে চলাচল করছে কনকচাঁপা ও কিষাণী নামে দুটি ফেরি ও হাজারো যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে ৫-৬টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সি-ট্রাক।
ফেরি নদীর মাঝপথে নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে গিয়ে পারাপারে সময় বেশি লাগায় পরিবহনের ট্রিপ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে এ রুটে চলাচলরত যাত্রীদের। চট্টগ্রাম থেকে ভোলার উদ্দেশে ট্রাকভর্তি কাঁচামাল নিয়ে এসেছেন ট্রাকচালক সাইফুল ইসলাম স্বপন। ফেরি নদীর মাঝপথে নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে গিয়ে সময়মতো ফেরি ভোলা থেকে না আসায় ট্রাকে কাঁচামাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্রসামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফেরি কনকচাঁপার মাস্টার আবদুস সালাম জানান, মজুচৌধুরীরঘাটের লক্ষ্মীপুর রহমত আলী চ্যানেলে এবং ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের সামনে পৌনে এক কিলোমিটার এলাকায় ডুবোচর জেগে ওঠায় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না ফেরি।
এতে করে প্রতিদিন ২-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহীসহ যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে ফেরি ও লঞ্চ ডুবোচরে আটকে থাকতে হয়। জোয়ার এলে নদীতে কিছুটা পানি বাড়ে। এরপর ফেরি ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। ফেরি কিষাণীর মাস্টার আবদুল বারেক জানান, নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে এ রুটে ফেরিসহ যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে প্রতিদিন। ডুবোচরের কারণে ফেরি মেঘনা নদীর মাঝপথে আটকে কখন জোয়ার আসবে সে অপেক্ষায় থাকতে হতে হয় পণ্যবাহী গাড়িসহ যাত্রীদের । এতে করে লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটে যাতায়াতের সময় বেড়ে যায়।
এ সমস্যা সমাধানে বিষয়টি লিখিতভাবে কয়েকবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। মজুচৌধুরীরঘাটের ইজারা গ্রহীতা মো. আলমগীর হোসেন জানায়, মজুচৌধুরীরঘাটের প্রবেশ মুখের জমা পলি দ্রুত ড্রেজিং করে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক না করলে এখানকার হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। লক্ষ্মীপুরে দায়িত্বরত বিআই ডব্লিউটিসির সহকারী পরিচালক শিহাব হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরঘাটের রহমত আলী চ্যানেলে এবং ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের সামনে পৌনে এক কিলোমিটার এলাকায় ডুবোচর জেগে ওঠায় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না ফেরি। জোয়ার-ভাটার দিকে তাকিয়েই ফেরি ও লঞ্চ ছাড়তে হয়।
0Share