খালেদ মাসুদ মোঃ ইকবাল: বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর) জেলা তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ২২শে জানুয়ারী সর্বপ্রথম ’নতুন দেশ’ পরবর্তীতে ’নতুন সমাজ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক আবদুল হাই।তাঁর জন্ম ১৯৪০ সালের ১২ অক্টোবর পূর্ববাংলার রামগঞ্জ থানার (পরবর্তীতে) চাটখিলের আবু তোরাবনগর এলাকায় ।
তাঁর বাবা মরহুম মুন্সী আব্দুর রহমান ছিলেন একজন শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি। আর্থিক টানাপোড়ন সত্ত্বেও তৎকালে আমাদের মরহুম পিতার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় মির্জাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রত্যন্ত গ্রামের ৬ মাইল দূরে অবস্থিত কামালপুর হাইস্বুল থেকে বাবা মেট্রিকুলেশন ও নাটোর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে বাংলা সাহিত্যে অনার্স এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে তিনি ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে নিহত মেজর আবুল মঞ্জুরের গৃহশিক্ষক ছিলেন। তৎকালীন সমাজে এলাকায় হাতে গোনা কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিকের মধ্যে বাবা ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালীর একজন কৃতি ব্যক্তিত্ব।তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল অধ্যাপনা দিয়ে। প্রথমে রাজশাহী কলেজে, পরবর্তীতে বগুড়া আজিজুল হক, কক্সবাজার কলেজ ও নোয়াখালী কলেজে। সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে লক্ষীপুর কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মরহুম আব্দুল জব্বারের অনুরোধে উনার কর্মজীবন লক্ষীপুর কলেজে শুরু করেন। নবপ্রতিষ্ঠিত এই কলেজে তখন থেকে উনার অবসর পর্যন্ত ১৯৯৭ সালে তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে অবসরে যান। শেষদিকে তিনি সোনাগাজী সরকারী কলেজে বদলী হন এবং স্বল্প সময়ের জন্য সেখানে অধ্যাপনা করেন।
তৎকালীন পুঁথিঘর লিমিটেড এর মালিক মিঃ চিত্তরঞ্জন বাবুর অনুরোধে তিনি বিভিন্ন শ্রেণীর বাংলা বিষয়ক সহায়ক পুস্তিকাসহ বিভিন্ন ব্যাকরণ ও রচনা বই এর প্রণেতা ছিলেন। সৃজনশীল লেখালেখিতে পারদর্শীতার জন্য অনেক জাতীয় পত্র-পত্রিকা তাঁকে লেখা আহবান করতো। ১৯৭৫ সালে ’নতুন সমাজ’ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আবার তা পুণঃ প্রকাশ করা সম্ভব হয়। ১৯৮০ সালে নবযুগ প্রেস প্রতিষ্ঠা করে বাড়ীর আঙ্গিনায় নিজস্ব ছাপাখানা স্থাপন করেন। তার সংবাদপত্রসেবী ছেলেরা সবসময় তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তিনি লক্ষীপুর প্রেসক্লাব এবং লক্ষীপুরের একটি সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।
তিনি দিয়েছেন সদালাপী, বিনয়ী, নির্লোভ, ধর্মানুরাগী ও সৎ জীবনযাপন করতে। ১৯৮৬ সালে প্রথম হজ্বব্রত পালন করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে সস্ত্রীক দ্বিতীয়বার হজ্ব এবং ২০০৭ সালে তৃতীয়বার সস্ত্রীক পবিত্র রমজান মাসে ওমরা হজ্ব ব্রত পালন করেন। দেশের বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা এবং এতিম খানায় বাবা অকাতরে দান করে গেছেন।লক্ষীপুর সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জনাব্ খলিলুর রহমানের ভাষায় তিনি ছিলেন জ্ঞান গরিমায় সত্যিকার অর্থে একজন পল্ডিত ব্যক্তি।
২০১৪ সালের ৯ই ফেব্রয়ারী সন্ধ্যায় ৭৭ বছর বয়সে বাবা ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। (ই›নালিল¬াহে অই›না রাজেউন)। পরদিন বাদ জোহর জানাজা শেষে লক্ষীপুরের তিতা খাঁ জামে মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
লেখক: অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের ছেলে
0Share