হাছান মাহমুদ শাকিল: মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দুঃসহ জীবন যাপন করছে লক্ষ্মীপুরের মো. রবি উল্যাহ খোকন (৫০) নামের এক ব্যক্তি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এমন অবস্থায় চলাফেরা করতে হচ্ছে তাকে। এদিকে তার চিকিৎসায় ৮ বছর ধরে প্রবাসী জীবনে উপার্জন করা সকল টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেছে। তারপরও সুস্থ হন নি তিনি। এ অসুস্থতায় প্রতিনিয়ত দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তার পরিবারকে।খোকন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের নান্নু চেয়ারম্যান বাড়ির ছানা উল্যাহ’র বড় ছেলে। তার পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই-ভাবী, স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, ১৫ বছর ধরে হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে জীবনযাপন করতে হচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন খোকনকে। মনে হয় যেন সে বিপন্ন জীব। হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা তার জীবন থেকে মুছে গেছে। শিকল বাঁধা অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে দেখা যায়। টাকা পয়সা না থাকায় উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না সে। অন্যদিকে সংসারে অভাব-অনটনে রোষানলে পড়ে একমাত্র মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হয়। এখন ভাইদের সহযোগীতায় কোনভাবে চলে তার সংসার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, যুবক বয়সে সে বিদেশ (ওমান) পাড়ি দেয়। ৮ বছর প্রবাসী জীবন শেষ করে অসুস্থ্য হয়ে দেশে ফিরে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেয়া হয়। এ চিকিৎসা দিতে গিয়ে তার উপার্জিত সকল টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যায়। একপর্যায়ে চিকিৎসা চালাতে তার পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়। তার পরেও তাকে সুস্থ্য করে তোলা যায় নি। ধীরে ধীরে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও কাউকে (মানুষ) দেখলে খেপে উঠে। তাই কোন উপায় না পেয়ে তার হাতে ও পায়ে লোহার শিকল বেঁধে রাখা হয়। সে থেকেই দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ এ অবস্থাতে দিন কাটাতে হয় তাকে। এমন অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য পরিবারের লোকজন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেন।
খোকনের বাবা ছানা উল্যাহ আক্ষেপ করে বলেন, আমি ৭০ বছরের বৃদ্ধ। এ বয়সেও আমি সুস্থভাবে চলতে পারি। কিন্তু আমার চোখের সামনে বড় খোকা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে জীবন কাটাচ্ছে। যা সহ্য করতে আমার খুবই কষ্ট হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত খোকন। তবে এ রোগের উন্নত চিকিৎসা ও নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে সে ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদ করেন।
0Share