নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে বাড়ি থেকে তুলে এনে গ্রাম্য-শালিশে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে নুরুল আমিন নামে এক শ্রমিককে (৫২) প্রকাশ্যে লাঠিপেটা ও নাকে খত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে। এ সময় দুই দফায় অভিযোগকারী ও তার স্ত্রীর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পাননি তিনি। স্ত্রী ও সন্তান এবং কয়েক শ’ মানুষের সামনেই ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রাম পুলিশ লাঠিপেটা করেন। ওইসময় ইউপি চেয়ারম্যানও লাঠি হতে নিয়ে মাটিতে ওই শ্রমিককে নাকেখত দিতে বাধ্য করেন। ঘটনার ২ দিন পর জরিমানা করা ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এমন অমানবিক ঘটনার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয়ভাবে গত দুইদিন ধরে ছড়িয়ে পরায় তোলপাড় চলছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বড় আউলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আহসানুল কবির রিপন বিচারের নামে প্রকাশ্যে এ অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে সমাজের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না তারা। ঘরের বাহিরে বের হলে লোকজন অপমানমূলক কথাবার্তা বলে। এজন্য ছেলে-মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে চাইছে না।
স্থানীয় সূত্র ও এলাকাবাসী জানায়, রমজানের আগে উপজেলার বড় আউলিয়া গ্রামে নুরুল আমিনের সঙ্গে একই গ্রামের মোঃ শহিদের মাটি কাটা নিয়ে বাধানুবাধ ও হাতাহাতি হয়। তারা দুইজনই মাটি কাটার শ্রমিক। এতে শহিদ সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে নুরুল আমিন তার চিকিৎসা করায়। এ ঘটনায় শহিদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করে। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ২য় রমজান সোমবার দুপুরে বড় আউলিয়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শাহজাহানের দোকানের সামনে শালিশী বৈঠক বসায়। গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে বাড়ি থেকে নুরুল আমিনকে বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়। চেয়ার পেতে গোলাকার হয়ে বসেছেন স্থানীয় উৎসুক লোকজন।
এসময় নুরুল আমিন নিজের দোষ স্বীকার করে শহিদ ও তার স্ত্রীর পায়ে ধরে ক্ষমা চায় প্রকাশ্যে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে ২০ বেত্রাঘাত ও নাখেখত দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। এসময় আকুতি করেও রক্ষা হয়নি তার। এক পর্য়ায়ে সেখানে গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম তাকে এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করেন। ১১-১১ টি লাঠিপেটা দেওয়ার পর সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম তাকে ধরে ফেলেন। পরে চেয়ারম্যান উঠে গিয়ে জাহাঙ্গীরের হাত থেকে লাঠি নিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে (নুরুল আমিন) নাকে খত দিতে বাধ্য করেন। পরে আবারও শহীদ ও তার স্ত্রীর পায়ে ধরে ক্ষমা চায় নুরুল আমিন। গোপনে শালিশী বৈঠকের লাঠিপেটা ও নাকেখতের দৃশ্য মোবাইল ফোনে সেটে ধারণ করেছেন নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। বৈঠকে ১ নম্বর ওয়ার্ডেও সদস্য (মেম্বার) বুলবুল ইসলাম খানসহ শতাধিক নারী-পুরষ উপস্থিত ছিলেন। গত শুক্রবার ওই ভিডিওটি স্থানীয়ভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দত্তপাড়া বাজার ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এজন্য হয়রানি এড়াতে সব অন্যায়- অবিচার মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়।
নির্যাতের শিকার নুরুল আমিন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্ত্রী সন্তান ও সমাজের সামনে আমাকে যে অপমান করেছে তা আমি ভূলতে পারছি না। এ কথা মনে হলে রাতে ঘুমও আসে না। লজ্জায় তার ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এ ঘটনায় বিচার দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল কবির রিপন বলেন, আমার একক সিদ্ধান্তে এ বিচার করিনি। এলাকার ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি সালিশী বোর্ড এ রায় দিয়েছে। ৫ সদস্য কারা-জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, আপনি আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখে দেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি কেউ জানায়নি। তবে এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
0Share