নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর চরলরেন্স বাজারে সম্প্রতি আগুনের পুড়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের ১১ শতাংশ জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগের তিন স্থানীয় অংগসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দখল প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার বিষয়টি জানেন না বলে অস্বীকার করলেও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান,এর আগে সরকারি জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর জায়গাটি দলীয় কার্যালয়ের জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি নেওয়া হলে উল্টো সিরাজুল ইসলাম জমিটি তার নিজের দাবি করে তাদের কাজে বাধা দেন।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার লরেন্স খাসেরহাট বাজারের রামগতি- লক্ষ্মীপুর সড়ক ঘেঁষে চর পাগলা মৌজার ১১ শতাংশ জমির খরিদ সূত্রে মালিক সিরাজুল ইসলামের লোকেরা। দীর্ঘদিন তারা ওই জমিতে ফার্মেসি,মুদি দোকান, ক্রোকারিজ স্টোর, মোটরসাইকেল, গ্যারেজসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে আসছিলেন। সম্প্রতি অঘ্নিকান্ডে দোকান ঘরগুলো পুড়ে যায়। সিরাজুল ইসলামে লোকেরা (আগুনে পোড়া) পূর্বের দখলীয় জমিতে ফের দোকানঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণাধীন দোকানঘরে রাতের আঁধারে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী কার্যালয়ের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অন্যায়ভাবে দোকানঘর দখল করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানান, তার খরিদসূত্রে মালিকানাধীন ১১ শতাংশ জমিতে দোকানঘর ভোগদখল করে আসছেন। সম্প্রতি এসব দোকান আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর পুনরায় নির্মাণের এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক তার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি দাবিকৃত চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শুক্রবার রাতে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে শতাধিক ভাড়াটে লোক দোকানঘর থেকে তার নির্মাণ সামগ্রী ও ১০ লাখ টাকার মালপত্র লুটে নিয়ে যায়। পরে তারা ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নামে ৪টি সাইনবোর্ড টানিয়ে তার নির্মাণাধীন দোকানঘর দখলের পাঁয়তারা করে। এ ছাড়াও তিনি দখলদারদের হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত বলে জানান।
কমলনগর উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রাজু জানান,ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড দিয়ে দোকান দখলে নিয়েছি সত্য, তবে এটা ছাত্রলীগের পার্টি অফিসের জন্য করা হয়েছে; নিজের জন্য নয়। বাকি অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর বলে জানান তিনি।
কমলনগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পি জানান, চরলরেন্স বাজারে যুবলীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জায়গা দখলের বিষয়টি তিনি জানেন না। তাকে না জানিয়ে কে বা কারা যুবলীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে; বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার জানান,তিনি দখলের রাজনীতি করেন না এবং কেউ দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দখলের চেষ্টা করলে সেটা পছন্দ করেন না বলে জানান তিনি। কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাইন উদ্দিন জানান, চর লরেন্স এলাকায় ছাত্রলীগের অফিস করা হবে- এ মর্মে কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়নি। সাইনবোর্ড টানিয়ে সরকারি কিংবা ব্যক্তিমালিকানার জমি দখল করার তো প্রশ্নই আসে না। যারা দখল করেছে, তারা ছাত্রলীগের কেউ না।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাস জানান, রাজু কমলনগরের ছাত্রলীগের কোনো পদে নেই। তাকে এখন ছাত্রলীগের কর্মী বলা যায় না। ছাত্রলীগের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখলের দায়-দায়িত্ব ছাত্রলীগ নেবে না। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপাপ্ত) ও রামগতির সহকারী কমিশনার (ভূমি) অজিদ দেব জানান,তহশিলদার বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। দখলদারকে সাইনবোর্ড সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
0Share