নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার কংশ নারায়ণপুর কৃষক সমসায় সমিতির কার্যালয়ে দেড়মাস ধরে তালা ঝুলছে। এতে পর পর জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ হওয়া ও স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এ সমিতির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা উদ্ভেগ ও উৎকন্ঠা। সমিতির ম্যানেজার সহ কর্মকর্তাদের দাবী সমিতির নির্বাচন বানচাল ও সমিতি দখলে নিতে গত নির্বাচনে সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হওয়া সদস্য ও স্থানীয় ইউনিয়ণ যুবলীগ সভাপতি কাজী মোঃ মাহফুজুর রহমান গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধায় বহিরাগতদের নিয়ে এসে সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের হুমকী ধমকী দিয়ে এসে অফিসে তালা ঝুলিয়েদেয়। বিষয়টি তারা লক্ষ্মীপুরের কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি, জেলা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে হুমকী ধমকী দেওয়ার ফলে সমিতির নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়।পরবর্তীতে সমিতির এডহক কমিটি গঠন করা হলেও তারা দায় দায়িত্ব নিতে পারছেনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কাজী মোঃ মাহফুজুর রহমান সমিতির অফিসে তালা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অফিযোগ করে বলেন, সমিতির ম্যানেজার ফজলে আজিম সমিতির টাকা পয়সা লুটপাট করে খেয়ে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সে সমিতির অডিট কাজ শেষ না করে নির্বাচন করার চেষ্টা করলে সমিতির সদস্যরা তাতে বাধা প্রদান করেছে। এ দিকে জেলা সমবায় কর্মকর্তা সমিতির সদস্যদের বাদ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে এডহক কমিটি করায় তারা এই কমিটি মেনে নিতে পারছেনা বলে জানিয়ে বলেন, আমরা এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ চেয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীয় সমিতির পরিদর্শক শহীদ আনছারি জানান, সমিতির নির্বাচনের সাথে অডিটের কোন সম্পর্ক নেই। কমিটি অডিট ছাড়া হতে পারে। সমিতির অডিট ছাড়া সাধারণ সভা হতে পারেনা। এদিকে নির্বাচন না করতে পারায় পরিচালা কমিটি গত ৩ অক্টোবর একটি এডহক কমিটি করার জন্য বিধি মোতাবেক সমিতির সদস্যদের নাম দিয়ে একটি রেজুলেশন করে কেন্দ্রীয় সমিতিতে জমা দিলেও আর ডিও উক্ত রেজুলেশন প্রত্যাখ্যান করে সমিতির সদস্য অভিযুক্ত কাজী মাহফুজ ও তার সহযোগী আব্দুর রহমান এবং তার অফিসের তিন কর্মকর্তাকে দিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠান। উক্ত কমিটি বিধি সন্মত না হওয়ায় জেলা সমবায় কর্মকর্তা মেহের উদ্দিন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে প্রধান করে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ৫সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। জানাযায়, সমিতির এডহক কমিটিতে হয় সবাই সমিতির সদস্য হতে হবে নয়তো সবাই সরকারি কর্মকর্তা হতে হবে। সমিতির সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা উভয়ের সমন্বয়ে এডহক কমিটি গঠনে সমবায় আইনে কোন সুযোগ নেই।

কিন্তু এডহক কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় অভিযুক্ত কাজী মাহফুজুর রহমান ও তার অনুশারীরা এই কমিটি মেনে নিতে পারছেননা। তারা অভিযোগ করে বলেন, সমিতির ম্যানেজার ফজলে আজিম সমিতির গভীর নলকুপ ভাড়া দিয়ে টাকা আতœসাৎ , সমিতির নলকুপের ড্রেন নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ, সমিতির মার্কেট নির্মাণের টাকা আতœসাৎ করেছেন। এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে ম্যানেজার ফজলে আজিম জানান, তাদের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। এ পর্যন্ত কখনো সমিতির নলকুপ কখনো ভাড়াই দেওয়া হয়নি। অপর দিকে ড্রেন উপজেলার অন্যসব সমিতির মতো কেন্দ্রীয় সমিতি দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ করেছে। সেখানে আমাদের কোন ভূমিকাই ছিলনা। সমিতির জমিতে মার্কেট নির্মাণ করার জন্য দোকান বরাদ্ধ দিয়ে বরাদ্ধ গ্রহীতাদের থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। ৭৩টা দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হলেও এখনো ১৩টি সমিতির মালিকানায় রয়েছে। সমিতি যে জমি থেকে বছরে মাত্র ১২শ টাকা আয় করতো এখন তা থেকে বছরে ১লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হবে। এই সব টাকার যথাযথ হিসাব রয়েছে। কেউ একটি টাকাও খাওয়ার সুযোগ নেই। সমিতির এক প্রকল্পের আয় অন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যায় করা হয়েছে। এতেকি সমিতির টাকা আত্মসাৎ, করা হয়েছে? তিনি জানান, যে সমিতি নিয়মিত লোকসান দিত সে সমিতি সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৮/২০ লাখ টাকা সে সমিতিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এখন সম্পদের পরিমাণ দাড়িয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ টাকা। সমিতির স্থায়ী সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৪টি গভীর নলকূপ, একটি মার্কেট, তিনটি দোকান একটি অফিস ঘর। ফজলে আজিম আরো দাবী করেন,সমিতির মার্কেট সম্প্রসারণ করে আরো প্রায় কোটি টাকা আয়করার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিতে এই সমিতিতে যারাই দায়িত্বে ছিল তারাই এই সমিতিকে লুটেপুটে খেয়েছে। এখন তারা এই উন্নয়ণ ও অগ্রগতি দেখে হতাশ হয়ে এই সমিতিকে ধ্বংশ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

এ দিকে লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান রহিমের নেছা জানান, বিরোধ করে এই উদীয়মান সমিতির কার্যক্রম বাধা গ্রস্থ করে সমিতির ক্ষতি করতে একটি মহল চেষ্টা করে যাচ্ছে। যা কাম্য হতে পারেনা।