সাজ্জাদুর রহমান: লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ৫ টাকার চিকিৎসা টিকেট ৫০টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সেলিমের বিরুদ্ধে। তিনি রোগীর অসহায়ত্বের সুযোগ খোঁজেন। হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত টাকা; করেন হয়রানি ও অসদাচরন। দীর্ঘদিন থেকে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী; তাদের স্বজন ও সচেতন মহল।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে দুপুরে ১টা পর্যন্ত সরেজমিন সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সেবা পেতে বর্হিবিভাগে দীর্ঘ লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অপরদিকে, কাউন্টারের পেছনের জানালা দিয়ে বাড়তি টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে টিকেট। এদিকে, যেসব শিশুরা বাবার সঙ্গে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছে তাদের দেওয়া হচ্ছে না টিকেট। বলা হচ্ছে সেবা পেতে মায়ের সঙ্গে আসতে হবে। মুলত নানান অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা। ৫ টাকার টিকেট কিনতে ১০/২০ টাকার নোট দিলেও বাকি টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দুপুর ১টা বাজতে না বাজতেই টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দিলেন কাউন্টারের সেলিম। উপায় না পেয়ে লাইনে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়েছেন। গৃহবধূ মুক্তা বেগম, তানিয়া সুলতানা, আমেনা বেগমসহ কয়েকজন কাউন্টারের সামনে জটলা বেধে আছেন টিকেটের আশায়। তাদের সবার কোলে অসুস্থ শিশু। বারবার অনুরোধের পর সেলিম ৫০ টাকা করে টিকেটের দাম দাবি করেন। উপায় না পেয়ে তিনজন নারী ৫০ টাকা করে টিকেট কিনেন। ভবানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মুক্তা বেগমের কাছে বাস ভাড়া ছাড়া বাড়তি টাকা নেই। যে কারণে চড়া দামে টিকেট কিনতে পারেননি; তিনিও বাড়ি ফিরছেন। প্রতিদিন এভাবেই চলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগ।
কথা হয় মুক্তা বেগমের সাথে, তিনি জানান ‘তার শিশু কন্যা দুই ধরে জ্বরে আক্রান্ত। বর্হিবিভাগ থেকে ৫ টাকায় টিকেট নিয়ে মেয়েকে চিকিৎসক দেখাবেন। দেড় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকেট নিতে পারেননি। জানালা দিয়ে টিকেট বিক্রি করা না হলে হয়তো দুপুর ১টার আগে টিকেট নিতে পারতেন। চড়া দামে টিকেট কিনতে না পারায় তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে’।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হামছাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা গৃহবধূ তানিয়া বেগম জানান, তার তিন বছরের মেয়ে জোহা ঠান্ডাজনিত রোগে ভোগছে। চিকিৎসার জন্য এসে প্রায় দেড় ঘন্টা দাড়িয়েও টিকেট নিতে পারেননি। পরে ৫ টাকার টিকেট ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে তাকে। এসময় ওই গৃহবধূকে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার খবর পেয়ে সেলিম বাড়তি ৪৫ টাকা ফিরতও দিয়েছেন।
এসব অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সেলিম বলেন, ভুল হয়েছে; এসব ভর্বিষতে আর হবে না।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, সেলিমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত তাকে কাউন্টার থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই, অনিয়ম ও হয়রানি বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share