নিজস্ব প্রতিনিধি, রামগতি : লক্ষ্মীপুরের রামগতির ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ইসলামিয়া কোলাকোপা মাদরাসা ও এতিমখানা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নানা বির্তক তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসাটি কে ঘিরে পক্ষবিপক্ষ প্রকাশ্য দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। যাতে মাদরাসার সুনামসহ পড়ালেখার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ বির্তকের মূলে দূর্নীতি, অনিয়ম, কমিটি দখল, অব্যবস্থাপনা, প্রধান শিক্ষকের পদ দখল, পাল্টা দখলসহ পরস্পর বিরোধী নানা বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ বুধবার (২৮ মার্চ) দুপুরে মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষকের ইন্ধনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু সংখ্যক ছাত্রকে দিয়ে বিক্ষোভ প্রর্দশনের অভিযোগ করেছেন বিক্ষোভে অংশ না নেয়া অপর কয়েকজন ছাত্র। এদিনের পরিকল্পিত ছাত্র বিক্ষোভে মাদরাসার অভ্যন্তরীন কোন বিষয় উল্লেখ্য না করে হঠাৎ করে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র অপসারণের দাবি করার বিষয়টি অপরাধ ঢাকার নতুন কৌশল হিসেবে দেখছে স্থানীয়রা।
মাদরাসার সাম্প্রতিক বির্তক বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় ভাবে জানা যায়, ১৯৩১ সালে রামগতির চর বাদাম ইউনিয়নের চর কলাকোপা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় এ মাদরাসা। মানুষের দান অনুদানে বিশাল এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় মাদরাসাটি। কঠিন নিয়ম, ভাল পড়াশোনা আর ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে এ মাদরাসার সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে নানা কারণে বেশি দিন টেকেনি সে সুনাম।
কওমী ধারার মাদরাসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদটি দখলের জন্য প্রতিনিয়ত চলতে থাকে নানা অপকৌশল। যে কারণে মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল মিয়ার পরিবার দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যে এক ভাগের সাথে যোগ হয় বর্তমান উপাধ্যক্ষ (সহপ্রধান) মো: আলীসহ তার অনুসারি কয়েকজন শিক্ষক। অপর পক্ষ বাকিদের দলে।
অন্যদিকে মাদরাসার মুহতামিম এবি ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠায় কমিটির সভায় তাকে অপসারণ করে তদস্থলে দায়িত্ব দেন কমলনগরের চর কাদিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ কে। তিনি এক সাথে পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পান। দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি দাওরায়ে হাদিসসহ নীচের ৫ টি শ্রেণী মাদরাসা থেকে তুলে দেন। এতে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয় এবং তার ক্লাস বর্জন করলে তিনি মাদরাসা থেকে অব্যাহতি নেন।
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহর অনুপস্থিতিতে সাবেক মুহতামিম এবি ছিদ্দিক আবার স্বপদে বহাল হন । গত ৩ মাস আগে কমিটির সভাপতি পদে আসেন আলহাজ মিয়া মো: ইলিয়াছ। তারা এসেই মাদরাসার স্বার্থ বিরোধী কাজের অভিযোগ এনে মাদরাসার মুফতি নিজাম উদ্দিনকে বহিস্কার এবং শিক্ষক মাওলানা মাহফুজুর রহমান কে মাদরাসায় আসতে বাঁধা তৈরি করেন।
ফলে বহিস্কৃত ও বিতাড়িত শিক্ষকদের নানা অভিযোগ, তদবির ও শালিশী বৈঠকের ফলে বিষয়গুলো রাতারাতি জটিল আকার ধারন করতে থাকে। শেষে বে-আইনিভাবে বহিস্কারের ন্যায় বিচার ও মাদরাসার আর্থিক অনিয়মের বিষয় তদন্তের জন্য মাদরাসার ব্যংক একাউন্ট সাময়িক স্থগিত চেয়ে শিক্ষক মুফতি নিজাম উদ্দিন রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উভয় পক্ষকে নোটিশ করে। পরে নোটিশের জবাবে তাদের বক্তব্যে আয় ব্যয় হিসাব, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, মাদরাসার জমির হিসাব, শিক্ষক নিয়োগ, বহিস্কার, ছাত্রদের সনদ প্রদানসহ কয়েকটি বিষয়ে তথ্যের গরমিল পায়। যার প্রেক্ষিতে বিষয়টির আরো সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে মাদরাসার এ সকল অনিয়মের আবেদন যাওয়াতে প্রেক্ষিতে প্রকৃত ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে কোমলমতি কিছু ছাত্রদের ভূল তথ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ করে তোলে মাদরাসার অভ্যন্তরে ইউএনও’র বিরুদ্ধে কয়েকটি শ্লোগান দেন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ঔ বিক্ষোভের ছবিতে দেখা যায় বিক্ষোভে হেটে কিছু ছাত্র হাসাহাসি করছে এবং কয়েকজন কে বরান্দায় ও হাসতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে আলিম সমমানের শিক্ষার্থী দেলোয়ার, মাহমুদুল হাসান, আ: করিমের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, শিক্ষকরা আমাদের বলেছেন ইউএনও শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরন করেছেন তাই তারা মাদরাসার ভিতরে ইউএনওর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছে। বিষয়টি সত্য না মিথ্যা তা যাছাই করেছেন কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর দেয়নি তারা।
এ বিষয়ে মুহতারাম আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, বহিস্কৃত ও বিতাড়িত শিক্ষক দুজন মাদরাসার স্বার্থ স্বংশ্লিষ্ট বিষয়ে আঘাত করেছেন তাই তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের বহিস্কার করতে পারে কিনা ? এ প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
চর বাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম মিয়া জানান, বুধবার ঘটনার দিন আমি ওই মাদ্রাসায় ছিলাম। আমার জানা মতে, ইউএনও’র বিরুদ্ধে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভূল তথ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ করে তোলা হয়েছে। আমার জানা মতে, মূলত ইউএনও মাদ্রাসার আয় ব্যয় হিসাব নিকাশ, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, মাদরাসার জমির হিসাব, অর্থ আয়ব্যয়ের পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ বাতিলসহ বিভিন্ন হিসাব চেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজগর আলী বলেন, আমি ন্যায়ের পক্ষে। অন্যায়কারী যেই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতেই হবে। কেউ তথ্য সন্ত্রাস করলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
জামেয়া কলাকোপায় বর্তমানে ২৮ জন শিক্ষক, ৬ জন অফিস সহায়ক, এবং ৭৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মাদরাসার নামে রয়েছে প্রায় শত একর কৃষি জমি, ২ টি বড় পুকুর, শতাধিক নারিকেল গাছ । প্রতিদিন মাদরাসার সামনে দান খয়রাত উঠে ৫/১০ হাজার টাকা।
0Share