লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর প্রতিবেদন: বাংলাদেশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৮০, ১৯৯১ মোট চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি একাধারে ডিপুটি স্পীকার, স্পীকার, উপরাষ্ট্রপতি, এবং রাষ্ট্রপতির মত শীর্ষস্থানীয় পদঅলঙ্কৃত করেন।
১৯৭২ সনে জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকে তিনি ডিপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। দেশের প্রথম স্পীকার শাহ আব্দুল হামিদ ১ মাস ২০ দিনের মাথায় মৃত্যুবরণ করলে জনাব মোহাম্মদ উল্লাহ স্পীকারের দায়িত্ব গ্রহন করেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান তার সভাপতিত্বে এবং স্বাক্ষরে অনুমোদিত হয়। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পদত্যাগ করলে মোহাম্মদ উল্লাহ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহন করেন। পরে ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের ২৪ জানুয়ারি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থেকে দেশের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন|
অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের আমলেও একবার মন্ত্রী হন তিনি। বিচারপতি সাত্তারের আমলের সর্বশেষ ১দিন ও তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ থেকে লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সরবরাহের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে দেন দরবার করেন তিনি। সে বছর জিয়াউর রহমান লক্ষ্মীপুর এলে গ্যাস প্রদানের ঘোষনা দেন। এরপরে ১৯৮০ সালে তিনি জাতীয়তাবাদি দল বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯১-এর সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রায়পুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৯৬ সনের সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনার কিছুদিনের মধ্যে তিনি পুনরায় আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।
জনাব মোহাম্মদ উল্লাহ ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাইছা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা আবদুল ওয়াহাব মুন্সী এবং মাতা জরিনা খাতুনের ৬ ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে তিনি ১০ম। রাখালিয়া জুনিয়র মাদ্রসায় পড়াশুনা শুরু করলেও ১৯৩৮ সনে তিনি লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর ১৯৪০ সনে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতার রিপন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুহম্মদুল্লাহ ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এ দলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী নির্বাচিত হলে তখন মোহাম্মদ উল্লাহ ওই কমিটির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন। সেই থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী কালের কমিটি পর্যন্ত তিনি আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলা আওয়ামী মুসলিম লীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি একই পদে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। ১৯৭০ সনে তিনি লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোহাম্মদউল্লাহ মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির সৈয়দ নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৯৯ সালের ১১ নভেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
0Share