নিজস্ব প্রতিনিধি: সোমবার একদিনেই সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রাঘাতে নারায়ণগঞ্জে চার জন, জামালপুরে দুই জন, পাবনায় একজন, মৌলভীবাজারে দুই জন, রাজশাহীতে দুই জন, হবিগঞ্জে একজন, কুমিল্লায় একজন ও রাজবাড়ীতে একজনসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৩০ এপ্রিল) তারা মারা যান। এর আগে রবিবার (২৯ এপ্রিল) বজ্রাঘাতে ২২ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে রোববারসহ (২৯ এপ্রিল) সারা দেশে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা দাড়িঁয়েছে মোট ৩৬ জন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। সোববার বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে
৩০ এপ্রিল ২০১৮- সর্বশেষ খবর অনুযায়ি নিহত-১৪
জামালপুরে মারা গেছেন ২ জন
নিহতরা হলেন – ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে বকুল মিয়া (২২) ও সরিষাবাড়ি উপজেলার শিবপুর গ্রামের আলেপ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৬)।
সরিষাবাড়ির মহাদান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, “গ্রামের একটি জমিতে ধান কাটছিলেন হাবিবুর। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।”
আর উলিয়া পাইলিং ঘাটে ঘাস কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই বকুলের মৃত্যু হয় বলে ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল জানান।
নারায়ণগঞ্জে ২
জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা ও সোনারগাঁ উপজেলায় ব্রজপাতে দুইজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন।
সোমবার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবর বাড়িতে রফিকুল ইসলাম (৩৩) ও সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুছারচর গ্রামে ওবায়দুল ইসলাম (৩২) মারা যান।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলে উপজেলার ভোলাব এলাকায় কাজের জন্য মাঠে গেলে বজ্রপাতে রফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। আহত হন ওই এলাকার কামাল মোল্লার ছেলে হাসেম মোল্লা (১৭)।
নিহত রফিকুল উপজেলার বন্দেরবাড়ি তাওড়া এলাকার একই এলাকার নূরুল হকের ছেলে। আহত হাশেম মোল্লাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুছার চর এলাকায় ধান কাটার সময় ব্রজপাতে ওবায়দুল ইসলাম মারা যান বলে সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান।
তিনি বলেন, এতে আহত হন সাদেক (৫৫) নামের অপর এক কৃষক। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিহত ওবায়দুল ইসলাম ওই এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
সুনামগঞ্জে ১
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামখোলা হাওরে এক ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।
নিহত ইয়াহিয়া আহমদ (৪২) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। কিছুদিন আগে ধান কাটার কাজে কানাইঘাট থেকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসেন তিনি।
ওসি ইখতিয়ার বলেন, “সকালে ইয়াহিয়াসহ কয়েকজন শ্রমিক স্থানীয় জামখোলা হাওরে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই ইয়াহিয়ার মৃত্যু হয়।”
রাজবাড়ীতে ১
বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রামে মতিন শেখ নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয় বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আলী জানান।
আবুল হোসেন বলেন, “সকালে ক্ষেতে কাজ করছিলেন মতিন । এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মতিন ওই গ্রামের মতু শেখের ছেলে।
হবিগঞ্জে ১
উপজেলার তেলকুমার হাওরে বজ্রপাতে শামসুল হক (৩৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে বানিয়াচং থানার ওসি মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শামসুল হক বানিয়াচং উপজেলার জাদুকর্ণপাড়ার গাজী রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, কদিনের বৃষ্টিতে হাওরের পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বৃষ্টির মাঝেই কৃষক শামছুল হক ধান কাটতে যায়। বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
পাবনায় ১
পাবনায় ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আম, লিচু ও বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে আকাশ কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে আসে। শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি।
পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শহিদুল ইসলাম শহীদ জানান, ঝড়ের সময় ঈশ্বরদী উপজেলার পল্টন ঘাটে বজ্রপাত হলে একজন মারা যান।
তবে তিনি নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানাতে পারেননি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, ঝড়ে চাটমোহর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় পাকা ও আধাপাকা ধান পড়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে যাওয়া ও বোরো ধান নষ্ট হবার খবর পেয়েছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে।
এর আগে রোববারও দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে ও বজ্রপাতে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়।
রবিবার ২৯ এপ্রিল ২০১৮: নিহত-২২
সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, কামারখন্দ ও শাহজাদপুর উপজেলায় বজ্রপাতে বাবা-ছেলেসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও চারজন। নিহতরা হলেন, কাজিপুরের ডিগ্রি তেকানী গ্রামের শামছুল মণ্ডল (৫৫), তার ছেলে আরমান (১৪), কামারখন্দের পেস্তক কুড়া গ্রামের কাদের হোসেন (৩৭), শাহজাদপুর উপজেলা ছয়আনি গ্রামের ফারুক খানের ছেলে নাবিল (১৭) ও রাশেদুল ইসলামের ছেলে পলিন (১৫)।
কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ জানান, রোববার সকালে ডিগ্রি তেকানী চরে ছেলেকে নিয়ে বাদাম তুলছিলেন শামছুল। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে তারা মারা যান।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামারখন্দ উপজেলার পেস্তক কুড়া গ্রামের একটি ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে আহত কাদের হোসেন নামে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথে মারা যান।
আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় ঝড় শুরু হলে শাহজাদপুরে বজ্রপাতে নিহত হয় নাবিল ও পলিন। এসময় আহত হয় আরও চারজন।
মাগুরাঃ মাগুরা সদরের অক্কুর পাড়া, রায় গ্রাম এবং শালিখা উপজেলার বুনাগাতী ও বাকলবাড়িয়া গ্রামে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন অক্কুর পাড়ার ভ্যানচালক শামীম, রায় গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে আলম, জয়পুরহাটের মনপুরা এলাকার আলম মিয়ার ছেলে মেহেদী এবং বাকলবাড়িয়া গ্রামের শক্তিপদ বিশ্বাসের ছেলে প্রল্লাদ বিশ্বাস।
নওগাঁঃ নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় এক গৃহবধূ ও এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সাপাহারে সোনাভানের স্বামীসহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন সাপাহারের শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামের সোনাভান (২২) এবং পোরশার বালিয়াচান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেন (১৪)।
সকাল ৮টার সময় শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামে নিজ বাড়িতে রান্নাঘরে কাজ করার সময় ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে সোনাভানের মৃত্যু হয়। অপরদিকে দুপুর ২টার দিকে মাঠ থেকে ছাগল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতে মুক্তার হোসেনের মৃত্যু হয়। সে বালিয়াচান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র বলে ওসি জানান।
নোয়াখালীঃ নোয়াখালী সদর ও সেনবাগ উপজেলায় বজ্রপাতে এক স্কুল ছাত্র ও এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সোহেল রানা জগলুর ছেলে ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির দিবা ক-শাখার ছাত্র ইকবাল হাসনাত পিয়াল (১৩) এবং ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মো. রজন মিয়ার ছেলে মো. শাহিন (২৬)।
সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জ সদরের সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে নিহত হয়েছেন ললিত মিয়া (৩০) নামের এক কৃষক। রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় বাড়ির পাশে বোরো ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
রাঙামাটিঃ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হন গৃহবধূ মানছুরা বেগম (৩৫)। ঘরের বাইরে কাজ করার সময় দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
গাজীপুরঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটায় বজ্রপাতে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বজ্রপাতের সময় ফ্যাক্টরীর গেটের কাছে দাড়িয়ে ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুর রহিম (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দরুইন গ্রামে রহিমসহ কয়েকজন কৃষক ধান কাটছিলেন। এ সময় প্রচণ্ড ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত হলে রহিম নিহত হন।
0Share