নিজস্ব প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর: নোয়াখালীতে বিমান বন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই পরিদর্শনে আসছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল এমপি। এ লক্ষ্যে রবিবার (২২ জুলাই) নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের ওয়াপদা বাজার এলাকায় পরিদর্শন করে আয়োজিত একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি। মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শনিবার বিকেলে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী উত্তর ওয়াপদা বাজার এবং বিমান বন্দরের জন্য নির্ধারিত সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন বলে স্থানীয় ভাবে জানা যায়।
রবিবার বিকাল ৩টার ওই সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামীলীগের নেতারা বক্তব্য প্রদান করবেন।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, এ অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে নোয়াখালীর জনগণ । অবশেষে নোয়াখালীতে বিমানবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত এপ্রিল মাসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর কাছে পৃথক চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সংসদ সদস্য মো. একরামুল করিম চৌধুরী। ওই চিঠিগুলোর পাওয়ার পর নোয়াখালীতে বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত ও পরিদর্শন সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক)।
নোয়াখালীতে বিমানবন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে আবেদনকারিগণ লিখেছেন, নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় স্বাধীনতার আগে ফসলি জমিতে কীটনাশক ছিটানোর জন্য একটি এয়ার স্ট্রিপ চলমান ছিল। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যার অভাবে বর্তমানে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এখানে পুরনো বন্দরটির জন্য ৩০ একর জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। তাই পতিত জমিতে বিমানবন্দর নির্মিত হলে জমি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না।
বিমানবন্দর নির্মাণে আরও যুক্তি হচ্ছে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর একটি ক্যান্টনমেন্টের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এ জেলার অনেক ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শষ্যভান্ডার খ্যাত নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্নচর এবং হাতিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের আবাদী জমির ফসলকে পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করতে বিমান থেকে কীটনাশক ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এপ্রেক্ষিতে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদী থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে নোয়াখালী ইউনিয়নের চরশুল্লুকিয়ায় বিমান বন্দর স্থাপনের জন্য ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগ বিমান বন্দর স্থাপনের কাজ শুরু করে।
অধিগ্রহণকৃত জমিতে প্রাথমিকভাবে রানওয়েসহ ১ কোটি ৭১ লক্ষ ১৩টাকার উন্নয়নকাজ শুরু করে। পরবর্তীতে তা প্রায় দুই কোটি টাকায় উন্নীত হয়। কিন্তু রানওয়ে নির্মাণের কাজ শেষ করা হলেও সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ না করায় বিমান বন্দর অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
ফলে শুরুতেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে। পাশাপাশি রানওয়ে নির্মাণ এবং জমি অধিগ্রহণের সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকারও বেশি গচ্ছা যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সরজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিমান বন্দরের জন্য যেটুকু কাজ হয়েছে তাও নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। রানওয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের ধান শুকানোসহ অন্যান্য গৃহস্থালী কাজে এবং এলাকার শিশুদের খেলার জায়গা হিসাবে। অব্যবহৃত জমিতে চাষাবাদ কছে কৃষকরা। বিমান বন্দরের সাইনবোর্ডটিও খুলে নিয়ে গেছে চোরের দল।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৬ আগষ্ট গণপুর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সচিবের বরাবরে একটি চিঠি লিখেন। বিমান বন্দরটি উন্নয়ন কিংবা অন্যা কোনভাবে এটিকে ব্যবহার করা যায় কিনা এব্যাপারে মাতামত জানতে চাওয়া হয় চিঠিতে। কিন্তু দীর্ঘ এত বছরেও তারা এর কোন উত্তর পাননি। সরকার এখন যে উদ্যোগ নেয় তারা সেটাই বাস্তবায়ন করবেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।
কি কারণে বিমান বন্দর স্থাপনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে তার উত্তর মিলেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে। বিমান বন্দর নিয়ে মতামত জানতে চেয়ে গণপূর্ত বিভাগ থেকে ৫ বছর পূর্বে একটি চিঠি দেয়া হলেও তার কোন জবাব দেয়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় বিমান বন্দরের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করে তা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা কিংবা অধিগ্রহণকৃত ভূমি মূল মালিকদের ফেরৎ দেয়ার দাবি যখন উঠেছে ঠিক সে সময়ে আবার পরিদর্শন কতটুকু আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে সন্দেহ করছে স্থানীয় জনগণ।
আবার শনিবার এনিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের কথার সাথে নোয়াখালী বিমানবন্দরের কথা ভেসে আসলেও নোয়াখালী বিমানবন্দর মূলত কোন বিমান বন্দর ছিল না বলে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে জানিয়েছেন বিমানের এক অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন নোয়াখালীতে পূর্বে স্থাপিত ও স্থাপনাটি মূলত স্টলফোর্ট।
0Share