মিসু সাহা নিক্কন, রামগতি : লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চল রামগতির চরাঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে, এখন পর্যন্ত কোন রোগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭ জন এবং তাদের মধ্যে ৫০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ১৭ জন রোগী।
উপকূলীয় এ অঞ্চলে জ্বরের প্রাদুর্ভাবের কারণে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে চলতি মাসে ৬২৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই ছিল বেশি। এতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। অন্যদিকে হাসপাতালে না এসে বাড়িতে চিকিৎসক ও স্থানীয় ঔষধ দোকানদারদের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগীরা।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা গেছে, জ¦রে আক্রান্ত ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে বয়স্ক ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এতে রোগীসহ তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ৬৯ জন রোগী। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ৭৯২ জন রোগী। চলতি মাসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছেন ২৪৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে ৬৭ জনের ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাইসুল হাসান বলেন, এডিশ মশা বিস্তারের কারণে গ্রামেও ডেঙ্গু জ¦র বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন স্বচ্ছ ও নেংরা উভয় পানিতেই এডিশ মশার জন্ম হয়। দিন ও রাত যেকোন সময়ে কামড় দিলে ডেঙ্গু হওয়ার প্রবনতা থাকে।
উপজেলা আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ গোলাম ছারওয়ার জানান, গত দুইদিন হাসপাতালে ৬৮জন রোগী ভর্তি ছিল। আজকে ৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জ্বর নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামনাশিস মজুমদার বলেন, প্রচণ্ড গরম, আবহওয়ার পরিবর্তনের কারণে জ্বরের এ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জ্বর নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পৌর মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে রামগতি পৌরসভা। গত ১৩ জুলাই থেকে পৌর এলাকার হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসে ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, পৌরসভায়, উপজেলা পরিষদ ভবন, হাসপাতাল ও আলেকজান্ডার বাজারে ইতিমধ্যে মশার ঔষুধ ছিটানো হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও মশার ঔষুধ ছিটানো হবে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য: লক্ষ্মীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চল ও মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রামগতি উপজেলা। উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের একমাত্র প্রতিষ্ঠান রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র চর আলেকজান্ডারে অবস্থিত ৩১ শয্যা (হাসপাতাল) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে ২০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামোর মধ্যে। জনবল সঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
0Share