জুনাইদ আল হাবিব: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চলের শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ-খাইয়ে নিতে না পারায় অনেক শিশু জীবনের শুরুতেই মারা যান। অযত্ন-অবহেলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৃত্যু ঝুঁকির মাঝে বেড়ে ওঠছে শিশুরা। এসব শিশুদের নিয়ে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য। মাঠ পর্যারের তথ্য সংগ্রহ করে এ নিয়ে দশ পর্বের ধারাবাহিক বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছেন লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের শিক্ষানবীশ কন্ট্রিবিউটর জুনাইদ আল হাবিব। আজ পড়ুন এর তৃতীয় পর্ব…
দ্বিতীয় পর্ব: ওরা স্কুল থেকে নৌকায়
লক্ষ্মীপুরের নদী উপকূলীয় উপজেলা রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদর এবং রায়পুর। এখানে কোমলমতি শিশুরা অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়-তুফানসহ অন্যান্য দুর্যোগের শিকার হয় প্রায়ই। জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে মাঝে মাঝে।
জোয়ারে বিধ্বস্ত রাস্তা, সেতু কিংবা সাঁকো ওদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় জোয়ারের পানির মাধ্যমে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। যা শিশুদের খাদ্যে মিশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
ঘূর্ণিঝড়ের জেলে শিশুর নদীতে প্রাণ হারায়।” অন্যদিকে জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনে উপকূলীয় এলাকায় পানি বেড়ে চলছে। পানি ডুবে মৃত্যু ঘটছে একের পর এক শিশুর।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কমলনগর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ৪দিনের মাথায় ৪শিশু পানিতে ডুবে মৃত্য হয়। উপকূল নিয়ে কাজ করেন পথিকৃত উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক ও উপকূল বন্ধু রফিকুল ইসলাম মন্টু। তিনি বলছিলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে এখনো উপকূলের নতুন প্রজন্মের ধারণা নেই। যা সবচেয়ে প্রভাব পড়ে ছোটদের ওপর।
পেশা হারিয়ে বহু পরিবারে দারিদ্রতা নেমে আসছে। এতে সুষম খাবারের অভাবে ওই পরিবারের শিশুর শারীরিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বর্তমানে বহু শিশু জন্মের সময়ও বিকলঙ্গতার সমস্যায় ভোগে।” তিনি আরো বলেন, “এছাড়াও কোন প্রসূতি মা’কে সহজেই চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না।
দুর্যোগে হয়তো যাতায়াতের একমাত্র পথটি অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে ওই প্রসূতি মা কিংবা শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।” পরিবেশবিদ ও লক্ষ্মীপুর জর্জকোর্টের আইনজীবি হারুনুর রশীদ বেপারী মনে করেন, “শিশুদের পরিবার যখন বাস্তুচ্যূত হয়ে অন্য কোথাও ঠাঁই নেয়, তখন অনেকেই ওই পরিবারের শিশুদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে।
ফলে ওরা পড়ালেখাসহ অন্যান্য ভালো কাজ করতে আগ্রহ হারায়। তার বখাটে হয়। অথচ তাদের কোন দোষ ছিলনা। জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের জীবনটারই পরিবর্তন ঘটেছে।” তিনি আরো মনে করেন, “অনুৎপাদনশীল শহরের জন্য বাজেট কমিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের এই শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। তাদের জন্য ভিন্ন প্রকল্পও চালু করা যেতে পারে।”
0Share