হঠাৎ করে প্রবল পানির চাপে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র স্রোতের মুখে মুহূর্তের মধ্যে মেঘনা গর্ভে চলে গেছে লুধুয়া ফলকন এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগের নির্মাণাধীন ৪০০ মিটার বাঁধের প্রায় ৩শ মিটার।
নদীতে বিলীন হওয়ার পথে নদী তীরবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি দ্বিতল ভবন, পাকা মসজিদ ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুছা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো ওই এলাকাসহ স্থানীয় স্থাপনা সমূহ রক্ষায় জুলাই মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রকল্পটির আওতায় সেখানকার ৪শ’ মিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। কাজটি শুরু হওয়ার পর এলাকাবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু গত দুই দিনের মেঘনার ভাঙনের তীব্রতা এলাকাবাসীর সেই স্বপ্ন কেড়ে নিতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হলে নির্মাণীধীন ৪শ’ মিটারের বাঁধটির প্রায় ৩শমিটার ধসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই বালুভর্তি জিও ও টিউব ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাতেই স্কুল, মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এ ভবনগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাঁধ তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও চরফলকন ইউনিয়নের ৭ নম্বর, পাটারীরহাট ইউনিয়নের ২, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় মেঘনার তীব্র ভাঙন চলছে। গত দুই সপ্তাহে ওইসব এলাকার বেশ কয়েকটি বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আবুয়াল হোসেন তালুকদার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কামরুল হাসান জানান, বুধবার রাতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হলে ক্লিনিকের মালামাল রাতেই তিনি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাসান সেখানে ছুটে যান এবং ক্লিনিকের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে অন্যত্র চালিয়ে যেতে বলেন।
স্থানীয় সাংসদের প্রতিনিধি হিসেবে আপদকালীন জিও ব্যাগের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার জানান, প্রকল্পটির আওতায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। স্কুল-মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো রক্ষায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহজাহান জানান, স্কুল ভবনটি রক্ষায় ঠিকাদারকে অতিদ্রুত দেড় হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে বলা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেখানে আরও কাজ করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, ভবনগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে সেখানে আরও ১৫ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
0Share