নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিজিটাল সেবা উপকূলের প্রত্যন্ত গ্রামের চেহারা বদলে দিয়েছে। নাগরিক সনদ, জন্ম নিবন্ধনের প্রমাণপত্র কিংবা অন্য কোন কাগজপত্রের জন্য এখন আর ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় না। অপেক্ষা করতে হয় না চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের। অনলাইনে দরকারি সব সেবা পাওয়ায় মানুষের জীবনটাই যেন সহজ হয়ে গেছে। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ প্রতিবেদন।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী ইউনিয়ন চর ফলকন। শুধু ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র কার্যকরভাবে চালু রেখেই এটা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে ওই কেন্দ্রে গেলে এলাকার মানুষ তুলে ধরেছেন ডিজিটালে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা।
দুর্গম জনপদের ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে ছেলের চাকরি হয়েছে জানতে পেরে চোখে আনন্দাশ্রু নুরুল হক মাঝির। যথাসময়ে অনলাইনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে না পারলে ছেলেকে বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হত। চর ফলকন ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের জাফর আলম রাকিব বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-তে সিপাহী পদে যোগদান করে দরিদ্র বাবাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের কল্যাণে।
চর ফলকন ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম এর ছেলে মোঃ ইব্রাহিম সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদানের।কিন্তু তার সঙ্গে ছিল না নাগরিক সনদ। মংলা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় ইব্রাহিম ঘটনাটি মোবাইলে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়ে সকাল ৯টার মধ্যে এই কাগজ হাতে পেয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিকভাবে নিজের স্বাক্ষর স্ক্যান করে নাগরিক সদন পাঠিয়ে দেন ই-মেইলে। এ দিয়ে নৌবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ হয় ইব্রাহিমের।
চর ফলকনের হাবিবপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক আলমগীর হোসেনের ছেলে রাশেদ দাঁড়াবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি জন্য।কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মোবাইলে বিষয়টি জানতে পেরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিল-স্বাক্ষর করে ই-মেইলে ফেরত পাঠিয়ে দেন চেয়ারম্যান। রাশেদ পরের দিন লাইনে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ পেয়েছেন।
মেঘনা পাড়ের এই ইউনিয়নের ডিজিটাল সেবা পৌঁছে গেছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। ইউনিয়নের জাপানী পাড়ার আলী করিমের ছেলে মামুন, একই গ্রামের কৃষক রুহুল আমিনের ছেলে প্রবাসী শ্রমিক ফারুক সৌদি আরবে কর্মরত অবস্থায় মারা যান। তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইংরেজি ও আরবী ভাষায় অনুবাদ করে ই-মেইল এর মাধ্যমে সেদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়। খুব সহজে স্বজনের লাশ ও পাওনাদি বুঝে পায় পরিবার।
প্রত্যন্ত এলাকায় ডিজিটাল সেবার বহু উদাহরণের মধ্যে এগুলো কয়েকটি দৃষ্টান্ত মাত্র। বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষও যে অনলাইন সেবার প্রতি এতটা আকৃষ্ট হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত চর ফলকন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে তথ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ চলে। কয়েকটি কম্পিউটার ও ল্যাপটপে কাজ করছেন তিনজন তরুণ। অনলাইনের নিউজ কিংবা উন্নয়ন তথ্য জানাতে এখানে প্রোজেক্টর ও বড় পর্দা রয়েছে। কেন্দ্রে সকাল, দুপুর, বিকেল সারাক্ষণই সেবা নিতে আসা মানুষের ভিড় থাকে।
শুধু তথ্যসেবা নয়, বহু ছেলেমেয়ে এখান থেকে কম্পিউটার শিখে নিজেদের চাকরি পাওয়ার পথ সুগম করে তুলছে। কেউ আবার ফেসবুক চালানো থেকে কম্পিউটারের মাউস ধরা শিখে এখন ওয়েবসাইট তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেছেন। ডিজিটালের কল্যাণে গ্রামেই তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি। প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থান করলেও ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের কল্যাণে এখানকার মানুষ সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত থাকছে দূরের স্বজনদের সঙ্গে।
আর এই কাজে সার্বক্ষনিক সাহায্য করছেন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ,এন,এম আশরাফ। এক সময়ের সাংবাদিক বর্তমানে চেয়ারম্যান। প্রযুক্তি পাগল এবং নদী ভাংগা মানুষের জন্য তার দরদের কোন শেষ নেই। শেষ সব কাহিনী নিয়ে আগামী পর্ব—–অপেক্ষা করুন।
0Share