নিজস্ব প্রতিনিধি: দরিদ্র বাবা। সাত ভাই-বোনের পরিবার। অভাব-অনটনের সংসার। প্রতিদিন পেটে পান্তা পড়ে না। জীবন বাঁচাতে দায়। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের বোঝা না হয়ে গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছে শিশু আছমা (১৩)।
কিন্তু দুঃখ তার পিছু ছাড়েনি। নির্দয় নির্যাতনের নির্মম শিকার হতে হয়েছে তাকে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে হতভাগ্য এ শিশুটিকে হাসপাতালের বেডে চটপট করতে দেখা গেছে। এর আগে বুধবার (২৫ মার্চ) বিকেলে নোয়াখালীর চটখীল পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মিজি বাড়ির বাসু মিয়া (লোহা কম্পানির) গৃহকর্ম থেকে পালিয়ে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফেরে আছমা। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গরম লোহার ছ্যাকা ও পিটুনির জখম নিয়ে সন্ধ্যা গুরুতর অবস্থায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে ভর্তি করে স্বজনরা।
নির্যাতিত শিশু আছম কমলনগর উপজেলার লরেন্স ইউনিয়নের চর মার্টিন গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ফয়েজ আহাম্মদের মেয়ে।
আহত গৃহকর্মী শিশু আছমা জানায়, বাসু মিয়া মেয়ে- রুম্পা (২৫)। স্বামী বিদেশ থাকায় বাবার বাড়িতে থাকে। রুম্মা বিনা কারণে তাকে মারধর করতো। চামুচ গরম করে শরীরে ছ্যাকা দিতো। কাজে কোনো ভুল হলে ঘরের দরজা বন্ধ করে পিটিয়ে জখম করতো। তার মা টুনি বেগমও তাকে পিটাতো। ঠিকমত খাবার দিতো না। সকালের খাবার দুপুরে; দুপুরের খাবার রাতে দিতো। অনেক রাত না খেয়েও কাটাতে হয়েছে। মশারি ও কয়েল ছাড়াই মেঝেতে ঘুমাতে বাধ্য করতো। চলে আসতে চাইলেও দিতো না। দিন-রাত খাটুকি খাটাতো। পরে উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচাতে বুধবার ভোরে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। বিকেলে বাড়ি পৌঁছলে সবাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আছমা আরও জানায়, তারা স্থানীয় প্রভাবশালী। আশপাশের লোকজন তাদের ভয় পায়। তাদের ভয়ে এলাকার কেউ কথা বলে না।
আহত আছমার ফুফু বিবি হাজেরা জানায়, দেয় মাস আগে রুম্পা আছমাদের বাড়ি এসে। দুই হাজার টাকা মাসে বেতন দেওয়ার কথা বলে তাকে বাড়ির গৃহকর্মের কাজে নেয়।
এ ব্যাপারে জানতে রুম্পা বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে (০১৭৮১ ২৯৪৬৬০) একাধিকবার কথা বলতে চেষ্টা করেও নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, শিশুটির শরীরে আগুনের ছ্যাকা ও পিটুনির আঘাত ও জখম রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। সুস্থ্য হতে সময় লাগবে।
চাটখীল পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর শাহাজান খাঁন বাবুল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবুও খোঁজ খরব নিয়ে দেখছি।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, শিশু নির্যতনের বিষয়টি মর্মান্তিক। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত করেছে।
চাটখীল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম উদ্দিন বলেন, অভিযোগ ফেলে তদন্ত করে জড়িতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
0Share