কাজল কায়েস: লক্ষ্মীপুর সদরের দত্তপাড়ার ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম মিরন গত বৃহস্পতিবার পাশের বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদীকে সতর্ক করে বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁকে হত্যার প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা এলাকায়ই অবস্থান করছে।
দুই দিন পর গত শনিবার রাতে মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে মিরন খুন হন। গত রবিবার প্রতিবেদককে এসব কথা জানিয়ে নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেন আবুল কাশেম। যদিও অভিযোগ রয়েছে, নিজের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল আবুল কাশেমের।
জানা যায়, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের ভয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ছয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদ, আহসানুল কবির রিপন, নুরুল আমিন, কামরুজ্জামান সোহেল, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও আবু ইউছুফ দিনের বেলায় এলাকায় থাকলেও রাতে জেলা শহরে বসবাস করছেন।
উদ্বিগ্ন থাকার কথা জানান বাঙ্গাখাঁর কাজী আনোয়ার হোসেন কাজল, দিঘলীর শেখ মজিব ও তেওয়ারীগঞ্জের ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলু। এঁদের মধ্যে কামরুজ্জামান সোহেল ছাড়া অন্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কুশাখালীর চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি নিজেই নিরাপত্তাহীন। গভীর রাত হলেই তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। এলাকার অবস্থা খারাপ।
এ জন্য আমি শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছি। ’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ১০ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের হাসন্দি গ্রামে ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ‘সন্ত্রাস আর খুনোখুনির জনপদ’ হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরে এটিই প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
এরপর বিভিন্ন সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে লক্ষ্মীপুরে অন্তত ২২টি ছোট-বড় বাহিনী, উপবাহিনী গড়ে ওঠে। প্রতিটি বাহিনীতে ৫০ থেকে ৩০০ সদস্য ছিল। তাদের হাতে বিপুলসংখ্যক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ থাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে তারা।
এ ছাড়া পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানে বেশ কয়েকটি বাহিনী প্রধান ও সহযোগীর মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় গত কয়েক বছর লক্ষ্মীপুর শান্ত ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চলে এখনো অন্তত এক ট্রাক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এসব উদ্ধারের জন্য আমি একাধিকবার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। ’
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘কোনো ইউপি চেয়ারম্যান যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে অবশ্যই পুলিশের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। এরই মধ্যে কিছু অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে।
0Share