আন্দারমানিক নামটি শুনলেই অনেকের মনে ভেসে ওঠতে পারে আধাঁরের মধ্যে আলোর ছবি। কিন্তু এ আন্দারমানিক গ্রামটি পুরোটাই অন্ধকার। লক্ষ্মীপুরে রয়েছে এমন একটি শিক্ষা আর উন্নয়ন বঞ্চিত সত্যিকারের গ্রাম আন্দারমানিক ।
৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ গ্রামটির অবস্থান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নে। প্রায় ৭৯ বছর আগে মেঘনা নদীর প্রবল ভাঙ্গন শেষে জেগে ওঠা চরটি আজকের আন্দারমনিক। তবে কি কারণে গ্রামের নাম আন্দারমনিক হয়েছে তা গ্রামবাসী না জানলেও বতমান অবস্থার সাথে নামকরণের স্বার্থকতার মিল খুঁজে পেয়েছেন তারা।
গ্রামবাসী জানায়, এক সময়ে নতুন জেগে ওঠা উর্বর চর আন্দারমানিকে বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো এসে বসতি গড়ে তোলে। বর্তমানে প্রায় ৯০০-১০০০টি পরিবারের বসবাস এ গ্রামে। ২০০০ সালের আগে গ্রামে কোন রাস্তা ছিল না। ২০০০ সালে একটি রাস্তা নির্মাণ হলেও বতমানে রাস্তাটিতে গাড়ী চলা তো দূরের কথা পায়ে হাটাও কষ্টকর। লক্ষ্মীপুর শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত এ গ্রামে কোন জনপ্রতিনিধির পা পড়েনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সে কারণে গ্রামটিতে কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি।
যার প্রেক্ষিতে এতগুলো পরিবার এ গ্রামে বাস করলেও সরকারিভাবে গড়ে ওঠেনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে কারণে স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আন্দারমানিক এ-জামান বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি অনুমোদনও প্রাপ্ত হয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, চরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি প্রশাসনের অসযোগিতার কারণে এক সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় ।
পরে ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ বিষয়ক যাচাই-বাচাই কমিটি গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য মন্ত্রনালয়ে পুন:সুপারিশ পাঠায়। কিন্ত সে সুপারিশের পর দীর্ঘ ৪ বছর অতিবাহিত হলেও আজও বিদ্যালয়টির জাতীয়করণের গেজেট প্রকাশ হয়নি।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় ৫০ শতক নিজস্ব জমিতে টিনসেড ঘরের বিদ্যালয়টিতে প্রায় ২শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। তবে হতাশার কথা হচ্ছে পাঠদানে নিয়োজিত ৪ শিক্ষকের কারোরই বেতন নেই। কবে বেতন হবে তা ও জানে না কেউ।
এখন গ্রামবাসীদের আশংকা হচ্ছে, শিক্ষকদের বেতনের অভাবে আবার কবে না জানি বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায় ? তাই গ্রামের অভিভাবকদের দাবি আন্দারমানিকের অন্ধকার দূর করতে এ বিদ্যালয়টির জাতীয়করণ জরুরি।
0Share