তাবারক হোসেন আজাদ: জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় ৩২ বছর ধরে এক বিছানায় দিন কাটছে বড় ভাই খোরশেদ আলমের। অপরদিকে তার ছোট ভাই মোরশেদ আলম মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে তাকে ৫ বছর ধরে শিকল বন্দী করে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এ দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন লক্ষ্মীপুরে এক হতদরিদ্র অসহায় পরিবার। অর্থের অভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না অভিভাবক। সরকারিভাবে যদি দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যায় বহন করা হয় তাহলে ছোট ছেলেটা সুস্থ হতে পারে আর বড় ছেলেটা অন্তত হুইল চেয়ারে বসতে পারলেই দুঃখ লাগবের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন পিতা-মাতা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মোরশেদ আলম নামের ২০ বছর বয়সী যুবককে। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে জানান পরিবার। অবলা চোখে তাকিয়ে থাকা, পান-সুপারী খাওয়া, পরিবারের সদস্যদের ডাকা আর অজানা রোগে শরীর খিঁচুনিতে বর্তমানে দিন কাটছে তার।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চর লামচী গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর (রিক্সা চালক) আজাদ হোসেন ও খুরশিদা বেগম দম্পত্তির ঘরে ২য় সন্তান হিসেবে জন্ম হয় মোরশেদের। পরিবার জানান, জন্মের পর ৭ বছর পর্যন্ত ভালো ছিল মোরশেদ। হঠাৎ করে খিঁচুনি উঠে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায় সে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেনা বলে জানান তার বাবা।
এদিকে, তাদের ১ম সন্তান মোরশেদের বড় ভাই খোরশেদ আলমও ঘরে শুয়ে থেকে কাতরাচ্ছেন। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী (দুই হাত ও দুই পা বিকলঙ্গ) হওয়ায় ৩২ বছর ধরে এক বিছানায় দিন কাটছে তার। তবে হাঁটতে পারার স্বপ্ন দেখেন খোরশেদ। এ প্রতিবেদকের কাছে হাঁটতে চাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে বলেন, আমি একটু হাঁটতে চাই, আমার অসুখের কারণে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারিনা।
দিনমজুর আজাদ জানান, আগে রিক্সা চালিয়ে কোনভাবে তাদের ঔষধপত্রসহ যাবতীয় খরচ চালাতাম। কিন্তু পা ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন আর রিক্সা চালাতে পারিনা। বর্তমানে বাড়ীর পাশে পান দোকান দিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু এতে হয়না। কোনদিন খেয়ে কোনদিন না খেয়ে থাকতে হয়। সরকারিভাবে যদি দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যায় বহন করা হয় তাহলে ছোট ছেলেটা সুস্থ হতে পারে আর বড় ছেলেটা অন্তত হুইল চেয়ারে বসতে পারলেই দুঃখ লাগবের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
মা খুরশিদা বেগম জানান, আমরা দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। প্রতি ছয় মাস অন্তর ৪২০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী বাধা পেলেও তা দিয়ে কিছুই হচ্ছেনা। সরকারি সহযোগিতার দাবি করেন তিনি।
এদিকে, একই দাবি করে স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা এসব পরিবারের সেবায় এগিয়ে আসলে বদলে যাবে তাদের জীবন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল জানান, এ দুই প্রতিবন্ধী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
0Share