লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, জনগণের চেতনা এবং অনুভূতিকে ধারণ করতে হবে। জনগণ মনে করছে এখনই দেশে নির্বাচন প্রয়োজন। খুব অল্প ও যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র আমাদের ওপর আবার আঘাত করতে পারে। এটি দেশের মানুষের জন্য কঠিন বিপদ হতে পারে। অপশক্তি যদি ছোবল মারে, তাহলে গণতন্ত্রের ভিত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন সংস্কারে নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এ তিনমাসের বেশি লাগার কথা নয়। সংস্কার শেষে অবিলম্বে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের প্রত্যাশা ও গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে। আমরা যদি এ মুহুর্তে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা না করতে পারি, তাহলে পাশের দেশে বসে এখনো হাসিনা ফ্যাসিস্টরা যে চক্রান্ত যে ষড়যন্ত্র করছে, সে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুরে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বণার্ঢ্য র্যালি উদ্বোধন কালে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা বিএনপির ব্যানারে এ আয়োজন করে। র্যালিটি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পুরাতন গোহাটার বাসভবন থেকে শুরু হয়ে চকবাজার-উত্তর তেমুহনী হয়ে ঝুমুর এলাকায় গিয়ে মিলিত হয়। প্রায় ১৭ বছর পর কোন বাধা ছাড়া বিএনপি বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে শান্তিপূর্ণ র্যালি সম্পন্ন করেছেন।
এ্যানি আরও বলেন, ১৭ বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। দেশকে গড়ার জন্য যদি আরও ২-৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়, দেশের ভিতকে শক্তিশালী করার জন্য, গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করার জন্য। সেই ত্যাগ স্বীকার করতেও আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। টেন্ডারবাজী আমাদের চাওয়া পাওয়া নয়। সন্ত্রাস আমাদের চাওয়া পাওয়া নয়। লুটপাট আমাদের চাওয়া পাওয়া হতে পারে না। আওয়ামী লীগ যে পথে হাঁটছে বিএনপি সেই পথে হাঁটতে পারে না। কারণ আমরা জনগণের প্রত্যাশাকে, জনগণের চেতনাকে ধারণ করি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার দর্শনের মধ্য দিয়ে তা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। তার জৈষ্ঠ্য সন্তান তারেক রহমান এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চান, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে গড়তে চান। সেজন্য আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আছি এবং থাকবো।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ দেশে যদি সেই ক্রান্তিলগ্নে তিনি নিউক্লিয়াসের ভূমিকা পালন না করতেন, তিনি যদি ঐক্য সৃষ্টি করতে না পারতেন, ওই দুঃশাসন, ওই ক্রান্তিলগ্ন থেকে এদেশ সেসময় রক্ষা হতো না। তার দেখানো পথেই জাতি দুঃশাসন ও ক্রান্তিলগ্ন থেকে মুক্তি পেয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া এ দেশ পরিচালনা করেছেন। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গণতন্ত্রের ভিতকে বারবার শক্তিশালি করেছেন। যখনই এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ফ্যাসিস্ট ভূমিকা তখন দেশনেত্রীর নেতৃত্বে আমরা আবার জাগরণ সৃষ্টি করে বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আবারো ৭ নভেম্বরের মতো আরেকটি ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য আমরা ঐকবদ্ধ আছি।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও, ষড়যন্ত্র পালায়নি। তারা যে টাকা লুটপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। বাহিরে বসে আজকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। ৫ আগস্ট আমরা রাস্তায় নেমে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, এখনো আমাদেরকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সজাগ ও সতর্কতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী ও মজবুত করতে হবে। তারেক রহমান শুধু এককভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে আন্দোলন করেননি। দেশ রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছে। জনগণকে রক্ষার আন্দোলন করেছে। এজন্য তিনি বলেছেন, যারা ফ্যাসিবাদে বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন করা হবে। সেজন্য দরকার গণতন্ত্রের ভিতকে আরও মজবুত করা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান, সদ্য নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাইন উদ্দিন চৌধুরী রিয়াজ, বিএনপি নেতা শাহ মোহাম্মদ এমরান, কামরুজ্জামান সোহেল, রায়পুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এবিএম জিলানী, জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবেরা আনোয়ারসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।
0Share