নিজস্ব প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর সদরের পোদ্দার বাজার রূপালী ব্যাংক শাখার গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার আত্মসাৎকৃত ১০ কোটি টাকা বিগত সাড়ে ৩ বছরেও ফেরত না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন ৬০০ গ্রাহক।
অনেক গ্রাহক তাদের সঞ্চিত অর্থ ফেরত না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্যাংকটির ওই শাখায় কর্মরত দ্বিতীয় কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব ও হিসাব রক্ষক আব্দুল লতিফ ব্যাংকের ৬০০ গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ তাদের একাউন্টে জমা না করে গোপনে আত্মসাৎ করে।
গত ২০১০ সালের ১১ আগস্ট জনৈক গ্রাহকেরা টাকা তুলতে এলে আত্মসাৎ করার ঘটনা ধরা পড়ে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই দুই কর্মকর্তা কৌশলে ব্যাংক থেকে পালিয়ে যায়।
পরে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খবর পেয়ে পোদ্দার বাজার ব্যাংক শাখা এসে ম্যানেজার খবির উদ্দিনকে সাময়িক বহিস্কার ও পলাতক দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এ সময় টাকা হারানো ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরৎ পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যহত রাখলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের দ্রুত সময়ে টাকা ফেরৎ দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নানান বাহানা করে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপকালে ময়না আক্তার (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৯৭৮৭) জানান, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য তার সঞ্চিত ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যাংক কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করায় এখন তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না।
স্থানীয় রোকনপুর গ্রামের বাসিন্দা (সঞ্চয়ী হিসাব নং ২৩৫৭) জানান, তার সঞ্চিত ৪৯ হাজার টাকা, পোদ্দার বাজারের ভাই ভাই লন্ড্রির মালিক (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৮৬৩৪) জানান তার সঞ্চিত ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ননন্দী গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৯৯২১) জানান তার সঞ্চিত ৩০ হাজার টাকা একাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা।
তারা জানান একই ভাবে ব্যাংকের ৬০০ গ্রাহকের সঞ্চিত ১০ কেটি টাকা কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করে নিয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘ দিনেও সঞ্চিত টাকা ফেরৎ না পেয়ে অনেকেই চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
ব্যাংকের শাখার কর্মরত বর্তমান ম্যানেজার ও প্রিন্সিপাল অফিসার নাজিম উদ্দিন জানান, সম্প্রতি ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৩৩ জন গ্রাহকের আত্মসাৎকৃত ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৬ টাকা ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ সম্বলিত একটি পত্র তিনি পেয়েছেন এরই মধ্যে ২৪ জনকে তাদের টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে বলে তিনি আশস্ত করেন। তবে মোট কতজন গ্রাহককে তাদের সঞ্চিত কত টাকা ফেরৎ দেয়া হবে তা তিনি জানাতে রাজি হননি।
রুপালী ব্যাংকের গ্রাহক ও ব্যাংক ভবনের মালিক ব্যাংকের নীচতলার ব্যবসায়ি ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক হাজী সেলিম পাটওয়ারী ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মানুষের টাকা ব্যাংক কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেছে। অপরাধ করলে ব্যাংকের কর্মচারিরা করেছে তার মাশুল দিতে হচ্ছে নিরীহ গ্রাহকদের। টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য গ্রাহকরা দিনের পর দিন ব্যাংকে এসে ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এমনকি ব্যাংকে এসে বর্তমান ম্যানেজারের কাছে তারা ভালো আচরণও পাচ্ছেনা। বাজারের অপর কীটনাশক ব্যাবসায়ী ও জেলা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি রুপালী ব্যাংকের গ্রাহক ওবায়েদ উল্যাহ অভিযোগ করে বলেন, সকল প্রমাণ দেওয়ার পরও ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে কয় বছর লাগে? টাকা দেওয়ার নামে তারা গ্রাহকের সাথে রং তামাশা করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে তিনি জানতে চান এভাবে সরকারি একটি ব্যাংক নিরীহ গ্রাহকদের সঙ্গে আর কত প্রতারণা করবে?
তারা দ্রুততম সময়ে ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে ব্যাংকের গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তদন্ত করে দুদক নোয়াখালী জোনাল অফিসের কর্মকর্তা বাদি হয়ে নোয়াখালীর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। যার নং বিশেষ মামলা নং ৩/১২ইং। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষীগ্রহণ চলছে।
এদিকে ব্যাংক ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন জানান, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎকারী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব পলাতক অবস্থায় গত কয়েক মাস আগে মারা গেছেন।
0Share