জামাল উদ্দিন রাফি,বিশেষ প্রতিবেদন ॥
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী বাল্য বিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। যে কারনে সামাজিক ভাবে নানা বিধ সমস্যার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংগঠনের জনসচেতনামুলক কার্য্যক্রম ব্যাপক ভাবে প্রচালিত হলেও কোন ক্রমেই বাল্য বিবাহ রোধ করা যাচ্ছেনা। কারন কি ?
বাল্য বিয়ের প্রভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ,বহুবিবাহ,পরকিয়া, আতœহত্যা, পুষ্টিহীন ও প্রতিবন্ধী শিশু প্রসব, গর্ভজনিত ও অপুষ্টি জনিত মৃত্যু,দৈনিন্দ এ সব সমস্যায় একেবারে সমাজকে বিষিয়ে তুলছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামগুলোতে দেখা যায় দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ মেয়েরা ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। অশিক্ষিত হওয়ায় ও সচেনতার অভাবে বিবাহের ১৩ মাসের মধ্যেই ৮০ শতাংশ মেয়ে সন্তান ধারন করে। মায়ের কম বয়স হওয়ায় মৃত্যু ঝুকিও বেড়েছে তুলনা মুলক ভাবে বেশি।
লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে সপ্তাহ ব্যাপি প্রতিনিধির অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাল্য বিয়ে সংগঠিত হওয়ার পিচনে শুদু অসচেতন মাতা-পিতাই জড়িত নয়। বরং এর সাথে জড়িত সমাজের অর্থলোভী ইউপি চেয়ারম্যান ও কাজী। ছেলে-মেয়ের বয়স বিয়ের উপযুক্ত না হলেও টাকার বিনিময়ে জন্ম সনদ দিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে থাকে। তার উপরে আবার সমাজে একদল মানবধিকার কর্মী নামে পরিচয় দিয়ে বাল্য বিয়ে অবৈধ বলে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকে টাকা আদায় করে। কেউবা আবার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিউজের ভয় দেখিয়ে হয়রানি করে অভিবাবকদেরকে। তবে বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতে পারে না ওই সব সাংবাদিক। লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেনা সমাজে প্রকৃত রূপ। তাহলে বাল্য বিয়ে থামবে কবে ? বাল্য বিয়ে রোধের পাশা-পাশি সমাজের এসব অর্থলোভী পেশাদারীদের প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টি রাখা উচিত।
বিশেষজ্ঞের মতে ১৮ বছরের আগে শরীরের অভ্যান্তরীন যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সন্তান ধারনের মত একটি জটিল প্রক্রিয়া সর্ম্পূণ করে সেগুলো বিকশিত হয়না। এজন্য ঝুকিপূর্ন মাতৃত্ব ও প্রসব কালীন জটিলতার শিকার হয় কেশোরী মেয়েরা। ২০ বছরের আগে সন্তান ধারন করায় রক্ত শূন্যতা,একলামশিয়া খিচুনিসহ নানাবিধ রোগ দেখা দেয় এবং বাচ্চার ওজন কম হওয়া শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও অধিকাংশ শিশু জন্ম নেয়।
বর্তমানে ৬৬ শতাংশের এক তৃতীয়াংশ ১৯ বছরের হওয়ার আগেই মা বা গর্ভবতী হচ্ছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন এর ২০১০ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড তেলত সার্ভে ২০০৭ এর তথ্য মতে বাংলদেশে নারীর বিয়ের গড়বয়স ১৫ বছর ৩ মাস থেকে ২৪ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে যাদের ১৮ বছরের মধ্যে প্রথম বিয়ে হয়েছে তাদের শত করা হার ৬৬ যা ২০০৪ সালে ছিল ৬৮ শতাংশ।
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৩০ শতাংশ মা এবং ৪১ শতাংশ শিশু অপুস্টিতে ভুগছে দেশের জনসংখ্যার ২৩ শতাংশই হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর কিশোরী২০০৮ সালের পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় যোগাযোগ কৌশল পত্রে জানা যায় কিশোরী দের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুন এবং শিশু মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় ৩০ ভাগের বেশী।
তবে ২০১০ থেকে চলতি বছরের জুন মাসের বেসরকারী হিসাবে কিশোরী মাতৃত্বের হার উন্নতি হয়ে শতকারা ৩০ শতাংশে দাড়িয়েছে।
অপ্রাপ্ত বয়েছে বিবাহ হওয়ায় মেয়েরা প্রাপ্ত বয়স হওয়ার আগেই তাদের রূপ লাবন্য শেষ হওয়ায় স্বামীদের চক্ষুসুল হয়। ফলে তাদের উপর নেমে আসে অসাভাবি নির্যতন। কেহ কেহ মুখ বুজে সয্য করে তাদের বাকী জীবন কাটিয়ে দেয়। আবার কেহ তিষার মতো অভিমান করে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। অনেকে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে এমন অসংখ্য ঘটনা বর্তমানে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। সচেতনদের মতে গনসচেতনতা ও যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভাব। সরকারকে বাল্য বিবাহ রোধে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহন করে সামাজিক এই ব্যাধি থেকে এ জাতিকে মুক্ত করা হউক।
0Share