কাজল কায়েস, জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর লক্ষ্মীপুরে রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ জন্য ১৯৭৩ সালে একটি জরিপ হয়েছিল। এরপর ৪১ বছর পার হয়েছে,
রাজনীতিবিদরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু আজও রেললাইন স্থাপন হয়নি। এ কারণে কৃষিনির্ভর এ জেলার পণ্য পরিবহনে সহজতা আসেনি। জেলাবাসীর এখন প্রধান দাবি, দ্রুত ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হোক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুরে রেললাইন স্থাপনের জন্য ১৯৭৩ সালে জরিপ করা হয়েছে। সে সময় কয়েকটি রেলস্টেশন শনাক্ত ও স্টেশনের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি সরকারের। কিন্তু এ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ওই সূত্রে আরো জানা গেছে, রেলওয়ে বিভাগ জরিপ করলেও এ রুটে রেললাইন স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২৭ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন রেলমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ের চট্টগ্রাম (পূর্বাঞ্চলীয়) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। আবেদনে তিনি এটিকে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ১৭ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি উলেখ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা বারবার লক্ষ্মীপুরে রেললাইন স্থাপনের প্রদিশ্রুতি দিয়ে ভোটের রাজনীতি করেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কথা রাখেন না। অথচ রেললাইন সংস্থাপন হলে জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসারসহ অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, রেললাইন স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সম্প্রতি সংশিষ্ট দপ্তরে দুটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর-রায়পুর হয়ে চাঁদপুর পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কিলোমিটার অথবা চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার লাইন স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুরের পাশের নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলায় রেললাইন রয়েছে।
ওই সূত্র আরো জানায়, গত ১২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরসহ ৩৩টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জেলার চারটি সংসদীয় আসনের সদস্য (এমপি), জেলা প্রশাসক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। বক্তারা লক্ষ্মীপুরে রেললাইন স্থাপনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। এর আগে ২৬ আগস্ট লক্ষ্মীপুর স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুলাহ জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় তাঁর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা লক্ষ্মীপুরে জরুরি ভিত্তিতে রেললাইন স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরকে নারিকেল, সুপারি, সয়াবিন ও ইলিশের রাজধানী বলা হয়। এ ছাড়া মেঘনা উপকূলীয় এ জেলায় রেকর্ডসংখ্যক ধান ও পান উৎপন্ন হয়। এসব কৃষিপণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। সড়ক ও নদীপথে এসব পণ্য রপ্তানি ব্যয়বহুল। এ জন্য অনেক সময় কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কারখানা স্থাপন করা হলে এ জেলার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এম আলাউদ্দিন জানান, লক্ষ্মীপুরে রেল লাইন সংস্থাপনের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। এটি বর্তমানে রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ জেলায় রেললাইন স্থাপন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল। তিনি স্বাধীনতার পর গঠিত প্রথম সরকারেও এই এলাকার এমপি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘৭৩ সালে এ নিয়ে একবার জরিপ হয়েছে। তখন কয়েকটি স্টেশন শনাক্ত ও স্টেশনের নাম্বার নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে নানা কারণে এটি আর হয়নি। সংসদে আমি বিষয়টি কয়েকবার উপস্থাপন করেছি। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভায় আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু রেললাইন হয়নি।’
জেলা প্রশাসক এ কে এম টিপু সুলতান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি ঢাকায় জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে লক্ষ্মীপুরে রেল স্থাপন করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেছি। তবে এটা সময়ের ব্যাপার। এটা রেল মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
0Share