নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, বৃহত্তর নোয়াখালী জ্ঞানীগুনী সাহিত্য সাংস্কৃতিক খ্যাতিমানদের জন্মস্থান। উপমহাদেশে বিক্রমপুর ও নোয়াখালী প্রতিভাবানদের জন্মস্থান।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চা হয়না। তাই পঁচা রাজনীতির উদ্ভব ঘটেছে। সাহিত্যিকরা যদি দেশবাসীর সামনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, তবে রাজনীতিকদের উপর তার প্রভাব পড়বে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কবীর চৌধুরী ও মুনীর চৌধুরীর মত লেখক সাহিত্যিকরা ভাষা আন্দোলন ও দেশের স্বাধীনতা তথা জাতীয় মুক্তি ও অধিকারের পক্ষে লেখনী ধারন করেছিলেন। আধুনিক গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞান মনস্ক রাজনীতির ভিত্তি সাহিত্যিকরাই সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি আরো বলেন সাহিত্য ও রাজনীতির মেলবন্ধনে অপসংস্কৃতি ও অপরাজনীতির অবসান হবে। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আবার লেখক সাহিত্যিক সৃষ্টি হবে এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে দেখেছিলাম। তিনি বলেন সাহিত্য মোটেই ক্ষুদ্র নয়, পরিপূর্ণ মানব সৃষ্টি এবং মনুষ্যত্বের বোধ জাগ্রত করে সাহিত্য। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের উল্লেখ তারই দৃষ্টান্ত বহন করে। তিনি বলেন, পড়ালেখা ও শিক্ষা বড় অস্ত্র, ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম, এতে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান গত ১০ এপ্রিল (শুক্রবার) লক্ষ্মীপুর জেলা সাহিত্য সংসদের সাহিত্য উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সাহিত্য সংসদের ১৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট এর সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। সাহিত্য সংসদের সভাপতি ডা. মোঃ সালাহউদ্দিন শরীফ এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কংকন চাকমা, বিশিষ্ট কবি ও শিশু সাহিত্যিক কবি সৈয়দ আল ফারুক, অধ্যাপক খলিলুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, বিশিষ্ট কবি ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল ও কবি খাতুনে জান্নাত। আলোচনায় অংশ নেন সাহিত্য সংসদের উপদেষ্টা কবি মুজতবা আল মামুন, অধ্যাপক মাইনউদ্দিন পাঠান, বিএমএ জেলা সভাপতি ডা. আশফাকুর রহমান মামুন, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম তপন, সাহিত্য সংসদের সহ-সভাপতি কবি আমির হোসেন মোল্যা ও এডভোকেট মুরাদ আল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক রামেন্দু মজুমদার তার বক্তব্যে লক্ষ্মীপুরের সাহিত্য সাংস্কৃতিক জগতের এককালের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব শাহাব উদ্দিন চৌধুরী ও শিক্ষক মুকুন্দ লাল দাস প্রমূখের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে সাহিত্য সংসদকে বাঁচিয়ে রাখা বিস্ময়কর ঘটনা। সবাইকে এ আবহ ধরে রাখা ও সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা মানবতার জন্যে। নিরপরাধ মানুষকে পেট্টোল বোমায় মারা চরম অমানবিকতা। সাধারণ মানুষের কথা শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্যে তিনি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডিসি কংকন চাকমা সাহিত্য সংসদের চর্চার ধারাবাহিকতার প্রসংশা করে বলেন এ কার্যক্রমকে জেলাব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। উদারতা ও বিপক্ষ মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে হবে। গ্রামীন সংস্কৃতি বিকাশে এগিয়ে আসার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথি কবি সৈয়দ আল ফারুক বলেন, সাহিত্য সংসদের ১৬ বছরের সাফল্য বড় করে দেখতে হবে। বিশেষ অতিথি অধ্যাপক খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে মানব সমাজ আজ লাইনচ্যুত। কবি সাহিত্যিকদের আজ জাগতে হবে। আমাদের সন্তানদের সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে উৎসাহিত করলে তারা বিপথগামী হবে না। তিনি বলেন আমরা বিভিন্ন মত ও পথের মানুষগুলো বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে চাই এবং নোংরা রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে চাই। এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু সাহিত্য সংসদের সফলতা কামনা করেন। ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল বলেন, সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে দেশের সেবাও হয়। নিজেকে বিকশিত করার লক্ষ্যে সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা করার জন্যে তিনি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে কবি সৈয়দ আল ফারুক ও কবি ড. আবু হেনা আবদুল আউয়ালকে লক্ষ্মীপুর জেলা সাহিত্য সংসদ পুরস্কার-২০১৪ এবং শিশু সাহিত্যিক ও সঙ্গীত শিল্পী সালমা করিম চৌধুরী ও বিশিষ্ট কবি খাতুনে জান্নাতকে লক্ষ্মীপুর জেলা সাহিত্য সংসদ পুরস্কার-২০১৫ প্রদান করা হয়। তাছাড়া মাসিক বাংলা আওয়াজ লেখক পুরস্কার-২০১৫ পেয়েছেন কবি ও গীতিকার আমির হোসেন মোল্যা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ জন ছাত্র/ছাত্রীকে সাহিত্য কুইজ, আবৃত্তি ও স্ব-রচিত কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। স্থানীয় লেখকদের গ্রন্থ প্রদর্শনী স্টল বসে। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাহিত্য সংসদের সহ-সভাপতি মোশারেফ হোসেন চৌধুরী। কয়েকজন কবি কবিতা পাঠ করেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাহিত্য সংসদের সহ-সভাপতি মাহবুবুল বাসার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাহমিদা মাহবুব রূপা ও এন্টি মনি।
0Share