লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে সরকারি খাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে মহাল গড়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা। তার তত্ত্বাবধানে সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের ছোট বল্লভপুর গ্রাম সংলগ্ন ‘ওয়াপদা’ খাল থেকে প্রতিদিনই উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। যেকারণে খালের দুই পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। প্রভাবশালী ওই নেতার নাম বাবুল আনসারী। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার মানুষের ক্ষতি করে গত কয়েক মাস ধরে তিনি নিয়মিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে ‘ওয়াপদা খাল’ থেকে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন। যার ফলে খালের দুই পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, যা এরআগে দেখা যায় নি। সব সময় সহযোগী বেষ্টিত বাবুল আনসারী ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলে তার কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান মেলেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় ছোট বল্লভপুর গ্রামের স্প্রীং ব্রীজ সংলগ্ন ‘আলহাজ্ব মো. সামছল হক ভবন’-এর সামনে বিশাল কৃষি জমির উপর একটি ‘বালু মহাল’ গড়ে তোলা হয়েছে। পার্শবর্তী মোবারক উল্লাহ মৌলভী বাড়ির উপর দিয়ে পাইপ ফিটিং করে খাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলিত বালু এখানে ফেলা হচ্ছে। বালু মহালে একটি নতুন ভেকু দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তার পাশের নিচু কৃষি জমিটি ইজারা নিয়ে এ বালু মহাল গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল আনসারী। কৌশল হিসেবে মহালটিতে বালু পাহাড়ের মত করে রাখা হয়নি। এখানে এমনভাবে বালু মজুত করা হয়েছে, যেন কেউ ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গাটি ভরাট করে রেখেছেন। ভরাটকৃত জমিটি ভেকু দিয়ে খনন করে বালু বিক্রয় করা হয়। আবার খালের বালু দিয়ে জমিটি ভরাট করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতা ছোট বল্লভপুর গ্রামের বিভিন্ন স্থানে একাধিক কৃষি জমি ইজারা নিয়ে এভাবে ভরাট করে রেখেছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ব চরশাহী ও ছোট বল্লভপুর গ্রামের কয়েক বাসিন্দা জানান, ওয়াপদা খালের বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে। কয়েকদিন পরপর জায়গা পরিবর্তন করে ড্রেজার মেশিন বসানো হয়। যেকারণে হঠাৎ করে ওয়াপদা খালের দুই পাড়েই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছেন খাল পাড়ের বাসিন্দারা। তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরে বালু বহনকারী হাইড্রোলিক যানবাহন চলাচলের কারণে গ্রামের রাস্তাগুলোর এখন বেহাল দশা।
চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আনসারী অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিবেদন না করার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, টাকা ছাড়া রাজনীতির মাঠে টিকে থাকা যায় না। এজন্য কিছু না কিছু করতেই হয়। খাল থেকে উত্তোলিত বালু বিক্রি করে যা পাই, তা আমি দলের পিছনে খরচ করছি। আমার এ কাজের সঙ্গে স্থানীয় আরও নেতাকর্মী জড়িত আছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করার কোনো নিয়ম নেই। চরশাহী ইউনিয়নের ছোট বল্লভপুরে ওয়াপদা খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে শিঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share