জুনায়েদ আহম্মেদ: শীত মৌসুমের শুরুতেই লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুরের ধুনকরা। শীত যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ততা বাড়ছে তাদের। এছাড়া ভোর হলেই মৌসুমি কারিগররা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় ঘুরে ঘুরে লেপ-তোশক তৈরি ও পুরোনোগুলো সারানোর কাজ করে চলেছেন।
জানা যায়, পুরো শীতজুড়েই লেপ-তোশকের দোকানগুলোয় বিক্রি বেড়ে যায়। ধুনকদের কাছে কেউ পুরোনো লেপ-তোশক মেরামত করতে, কেউ নতুন লেপ-তোশক বানাতে যান। আর এসব সামগ্রী তৈরি, মেরামত, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি করতে কয়েক হাজার মৌসুমি শ্রমিক ও ধুনক অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করবেন।
মৌসুমি কারিগররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে লেপ-তোশক সেলাই কিংবা চুক্তির ভিত্তিতে পুরোনোগুলো সারাই করেন। অনেকে শহরের লেপ-তোশকের দোকানে মাসিক বেতন কিংবা কমিশন ভিত্তিতে কাজ নেন। এ মৌসুমে ফেরিওয়ালারাও রিকশা-ভ্যানে করে লেপ-তোশক বিক্রি করেন। শহরের কর্মজীবী ব্যাচেলররা সাধারণত এদের কাছ থেকে তাদের চাহিদামতো লেপ-তোশক কিনে নেন। মহাজনদের কাছ থেকে কমিশনে কিনে গ্রামাঞ্চল আর শহরের পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করেন তারা।
জেলা শহরের দক্ষিণ তেমুহনী এলাকার লেপ-তোশক ব্যবসায়ী দিদার আলম জানান, তুলার মান ও পরিমাপের ওপর নির্ভর করে লেপ-তোশকের তৈরির খরচ। লেপ বানাতে সাধারণত কার্পাস তুলা ব্যবহার করা হয়। তার কাছে মানভেদে ৪০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দামের লেপ রয়েছে। আর তোশক ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। আকারভেদে প্রতিটি লেপ-তোশক তৈরিতে কারিগরদের মজুরি দিতে হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এ বছর অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি থেকে বেচাকেনা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলার একাধিক লেপ-তোশকের দোকান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানেই ধুনকরা লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্রেতার চাহিদামতো দোকানিরা লেপ-তোশকের কাপড় ও তুলা দেখাচ্ছেন। কারিগররা মুখে কাপড় বেঁধে তুলা প্রক্রিয়াজাত করেন। আবার কেউ লেপ-তোশকের কাভারের মধ্যে তুলা ভরছেন ও সেলাই করছেন।
কয়েকজন লেপ-তোশক দোকানি জানান, এ বছর তুলার দাম তেমন বাড়েনি। কার্পাস তুলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বোমা তুলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চাদর তুলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও গার্মেন্ট তুলা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফেরি করে লেপ-তোশক বিক্রি করেন সদর উপজেলার কামরুল মিয়া। তিনি জানান, এক সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন। গত দুবছর থেকে নিজ এলাকায় এসে গ্রীষ্মকালে সবজি ফেরি করেন আর শীতকালে লেপ-তোশক ফেরি করেন। শীত এলে এ কাজের চাপ বেড়ে যায়। সকালে মহাজনের কাছ থেকে লেপ-তোশক নিয়ে ভ্যানে করে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। এতে তার দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।
শহরের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী রহিম সওদাগরের দোকানের ধুনক কবির মিয়া জানান, শীত এলে ধুনক-কারিগরদের কদর বাড়লেও বাড়েনি তাদের মজুরি। অধিকাংশ ধুনক-কারিগরদের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। আর চুক্তিতে প্রতি পিস তৈরিতে ২০০-৩০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। ফলে এ পেশায় মজুরিবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও তিনি মনে করেন।
0Share