ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ফসল ঋণ আদায় এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। রবিবার (১৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফণীতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খেলাপি ঋণের জন্য প্রযোজ্য ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল ও পুরাতন ঋণ পুনঃতফসিল করে, দ্রুততম সময়ে নতুন ঋণ বিতরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দেশের বেশ কিছু জেলায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে: লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, বগুড়া, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা। এসব জেলায় কৃষি খাতের পুনর্বাসন প্রয়োজন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কৃষিঋণ বিতরণ জোরদার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কোনও কৃষক যাতে ঋণ পেতে বিলম্ব বা কোনোরূপ হয়রানির শিকার না হন, সে লক্ষ্যে ব্যাংকসমূহ যথাযথ তদারকি করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কেইস টু কেইস ভিত্তিতে ফসল ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, নতুন করে কোনও সার্টিফিকেট মামলা দায়ের না করে, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অনাদায়ী ঋণসমূহ তামাদি হওয়া প্রতিবিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলাগুলোর তাগাদা আপাতত বন্ধ রেখে সোলেনামার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়া ফণীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অনুকূলে কৃষিঋণ বিতরণসহ অন্যান্য তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে মাসিক ভিত্তিতে অবহিত করতে হবে।
লক্ষ্মীপুরে ফণীর আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি:
ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় ঘর চাপা পড়ে আনোয়ারা খাতুন (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০জন বাসিন্দা।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে রামগতি উপজেলার চরআলগি, চরগজারিয়া, তেলিরচর, বয়ারচর, চর আবদুল্লাহ এলাকায় প্রায় পাঁচতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলা বিভিন্ন স্থানে বহু গাছপালা ভেঙে পড়েছে, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের।
কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় নদীর তীর রক্ষা বেড়িবাঁধের প্রায় ২শ মিটার বাঁধ নদীতে ধ্বসে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো বাঁধ।
রায়পুর উপজেলার টুনুর চর, কানি বগার চর, মিয়ার হাট ও চরলক্ষ্মী গ্রামের ঘরবাড়ি, পাকা সয়াবিন ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙে লোকজনের গায়ে পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৭জন। প্রায় দুইশতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় এলাকার ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
0Share