জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক : হারবাল চিকিৎসার নামে মতলববাজদের প্রতারণা অব্যাহত রয়েছে লক্ষ্মীপুরে। বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময়ের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার
মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এদিকে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে আনাছে-কানাছে রঙ্গিন আপত্তিকর বিভিন্ন লেখা সম্বলিত পোষ্টারে চেয়ে গেছে। এছাড়াও লক্ষ্মীপুর থেকে নিয়ন্ত্রিত গ্রীন ক্যাবলস নেটওয়ার্ক ও লক্ষ্মীপুর ক্যাবলস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন হারবাল কোম্পানির কুরুচিপূর্ন বিজ্ঞাপন প্রচারনা করা হয়। এতে প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক ও পারিবারিকভাবে নানা বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়ে আসছে।
এদিকে স্থানীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কে অশালিন এ বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। ওই মহলের ভাষ্যমতে, স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত দুটি ক্যাবল নেটওয়ার্কে ৫-৭টি হারবাল কোম্পানির অশালীন বিজ্ঞাপন প্রচার হওয়ায় সমাজে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। ওই বিজ্ঞাপনে পুরুষদের ছোটভাবে উপস্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যান্সার, বাত-ব্যাথা, হ্যাপাটাইটিস, প্যারালাইসিস, ডাইবেটিস, টিউমার, হাঁপানি ইত্যাদি জটিল ও পুরাতন রোগের শতভাগ গ্যারান্টিসহ চিকিৎসা দেয়া হয়। শারীরিক অমতার চিকিৎসায় ২৪ ঘন্টায় ফলাফল, বিফলে মূল্য ফেরত। শতভাগ গ্যারান্টিতে মাত্র এক মাসের মধ্যে রুগ্ন-ভগ্ন স্বাস্থ্য সুস্থ্য সবল করা হবে- এভাবেই এসব রোগের চটকদার বিজ্ঞাপন চলছে।
লক্ষ্মীপুর সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার সাধারণ মানুষ এসব বিজ্ঞাপন দেখে সুচিকিৎসা পাওয়ার আশায় এসব চিকিৎসকের কাছে গিয়ে যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি নতুন নতুন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় হারবাল চিকিৎসার নামে এভাবে প্রতারণা চললেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। এসব চিকিৎসকদের অপচিকিৎসা বন্ধে সিভিল সার্জনকে অনুরোধ জানিয়েছে ভূক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন হারবাল প্রতিষ্ঠানের থেকে এক শ্রেণীর পত্রপত্রিকা ও স্থানীয় ডিশ চ্যানেলে অশালীন ভাষায় বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে রোগীর দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চলছে। রোগীদের আকৃষ্ট করার জন্য রং বেরংয়ের লিপলেটও বিলি করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন ও লিফলেট পড়ে শিার্থীরা অনেকেই বিব্রত হচ্ছেন। চিকিৎসার অন্তরালে রোগীদের সাথে প্রতারণা চলছে। এক শ্রেণীর মানুষ হারবাল চিকিৎসার নামে জমজমাট ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। মূলত যৌন রোগ সারানোর নামে লাগামহীন বাণিজ্য চলছে। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ওষুধের যেকোনো ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ থাকলেও হারবাল চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো রাস্তার ধারে, অলিগলিতে, বাসে ইত্যাদি স্থানে এসব প্রতিষ্ঠানের অশ্লীল বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় ক্যাবল, টিভি অপারেটরদের চ্যানেলের মাধ্যমে এসব বিজ্ঞাপন ড্রয়িং রুমে চলে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে গজিয়ে ওঠা ইউনানী, হারবাল চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে নিজস্ব ফর্মূলায় ঝোঁকের তেল, বড়ি ও নানারকম মালিশ ইত্যাদি বানিয়ে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে টার্গেট করে কথিত এ চিকিৎসা বাণিজ্য চলছে।
লক্ষ্মীপুর সদরের টুমচর, ভবানীগঞ্জ, তেওয়ারীগঞ্জ, দালালবাজার, চন্দ্রগঞ্জ, জকশিন, মান্দারী, চরশাহী, দিঘলী, রায়পুর পৌরশহর সহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে যেমন হায়দরগঞ্জ, খাসেরহাট, রাখালিয়া বাজার, বাংলাবাজার, মিতালী বাজার, চরআবাবিল, মোল্লারহাট, রামগতির জমিদার হাট, আলেকজান্ডার, রামগতির হাট, রামদয়াল, কমলনগরে হাজিরহাট, করইতলা, তোরাবগঞ্জ, রামগঞ্জ শহরসহ পানিওয়ালা, নোয়াগাঁও, চৌধুরী বাজার, নবীগঞ্জ বাজার, ভাটরা বাজার, হোটাটিয়া বাজারে হারবাল চিকিৎসার নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। মানুষে যৌন সংক্রান্ত বিষয়টিকে পুঁজি করে কথিত চিকিৎসকরা গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিজ্ঞাপন ও লিফলেটের ভাষা দেখে কম লেখাপড়া জানা লোকজন এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এসব হারবাল চিকিৎসার অন্তরালে যৌন উত্তেজক মাদক ব্যবসাও চলছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ভেজাল ওষুধ তৈরি করে তা অবাধে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ইবনেসিনা হারবাল, আয়ুর্বেদিক হারবাল, রায়পুর হারবাল কিনিক, চৌমুহুনী হারবাল, কবিরাজ ঘর, বারাকাত হারবাল, জার্মান হারবাল, হারবাল কেয়ার, বিসমিল্লাহ হারবাল, সুমন হারবাল, ভারত হারবাল, পাহাড়ি হারবাল, এশিয়া হারবাল, রহমানিয়া হারবাল, চায়না বাংলা হারবাল, বনজি হারবাল, বনলতা হারবাল, মর্ডান হারবাল, বেঙ্গল হারবাল, কলিকাতা হারবাল মেডিকেল, বিসমিল্লাহ ধাওয়াখানা ও ননি গোপাল হারবালসহ প্রায় ৩০টির মতো হারবাল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সের ওপর নির্ভর করে চলছে। তবে ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম থেমে নেই। এখানে কোন রোগী এলে তাকে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। কোন হেকিম না থাকলেও রোগীর কাছ থেকে পরামর্শ ফি বাবদ ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এরপর রোগের লণ অনুযায়ী ওষুধ প্রদান বাবদ আরো ১ হাজার থেকে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। যৌনশক্তি বর্ধক থাই পাওয়ার বড়ি ৫০০ টাকা, লংটাইম হালুয়া ৩০০ টাকা, হাববে কবাত ২০০ টাকা, ম্যাসেজ ওয়েল মালিশ বাবদ ২০০-১৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও মেয়েদের বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসা গ্যারান্টিসহ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা দেশীয় চিকিৎসক সমিতির সভাপতি কবিরাজ মো. বিল্লাল হোসেন মুন্সী বলেন, হারবাল চিকিৎসার নামে কিছু ব্যক্তি প্রতারণা করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরে (ডিস লাইন) কয়েকটি হারবাল কোম্পানির কুরুচিপূর্ন বিজ্ঞাপন প্রচার কথা সচেতন লোকজন আমাদেরকে জানিয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হস্তক্ষেপ করলেই এসব বিজ্ঞাপন বন্ধ করা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষ্মীপুর গ্রিণ ক্যাবল নেটওয়ার্কের দায়িত্বশীল এক ব্যক্তি বলেন, বিভিন্নস্থানে স্থানীয়ভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে, তাই আমরাও বিজ্ঞাপন করছি। আমার এখানে কোনো অশালীন বিজ্ঞাপন এখন আর দেয়া হচ্ছে না।
সৌজন্যে: সহযোগি দৈনিক মেঘনারপাড়
0Share